অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
From Wikipedia, the free encyclopedia
অগ্নাশয়ের ক্যান্সার হয় যখন পাকস্থলী পিছনের একটি গ্রন্থি অগ্নাশয়ের কোষসমূহ আনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে একটি পিণ্ড সৃষ্টি করে। এই ক্যান্সার কোষগুলো শরীরের অন্য অংশে আক্রমণ করতে পারে। [2] অগ্নাশয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে [3] যাদের মধ্যে অগ্নাশয়ের আডেনোকারসিনোমা হয় সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮৫%,[4] এবং অগ্নাশয়ের ক্যান্সার বলতে অনেক সময় এই কান্সারকেই বোঝানো হয়। আডেনোকারসিনোমার শুরু অগ্নাশয়ের সেই অংশ থেকে যা পাচক উৎসেচক তৈরী করে। আরো কিছু ধরনের ক্যান্সার যারা একসাথে বেশিরভাগ অ-আডেনোকারসিনোমার প্রতিনিধিত্ব করে এই কোষগুলো থেকে আরম্ভ হয়। শতকরা এক থেকে দুই ভাগ টিউমার মূলত নিউরএণ্ডোক্রাইন টিউমার যা অগ্নাশয়ের হরমোন তৈরী করা কোষগুলো থেকে আরম্ভ হয়।
অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার | |
---|---|
এই ডায়াগ্রামটা পাকস্থলির পিছনে অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান দেখাচ্ছে | |
বিশেষত্ব | অনকোলজি |
লক্ষণ | হলুদ ত্বক, পেটে বা পিঠে ব্যথা, অব্যক্ত ওজন হ্রাস, হালকা বর্ণের মল, কালো প্রস্রাব, অ্যানোরেক্সিয়া |
রোগের সূত্রপাত | ৪০ বছর বয়সের পর |
ঝুঁকির কারণ | তামাক ধূমপান, স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস, কিছু বিরল জেনেটিক পরিস্থিতি |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | মেডিকেল ইমেজিং, রক্ত পরীক্ষা, টিস্যু বায়োপসি |
প্রতিরোধ | ধূমপান নয়, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, কম লাল মাংস ডায়েট |
চিকিৎসা | সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, উপশমক যত্ন |
আরোগ্যসম্ভাবনা | পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার হার ৫% |
সংঘটনের হার | ৩৯৩,৮০০ (২০১৫) [1] |
মৃতের সংখ্যা | ৪১১,৬০০ (২০১৫) |
এরা অগ্নাশয়ের আডেনোকারসিনোমার চেয়ে কম আক্রমণাত্মক্নাত্মক সবচেয়ে বেশি হওয়া অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের উপসর্গ ও লক্ষনগুলো হল চামড়া হলুদ হয়ে যাওয়া, পেটে বা পিঠে ব্যাথা, ব্যাখ্যাতীত ওজন হারানো, হালকা রঙের পায়খানা, গাঢ় রঙের প্রস্রাব,অরুচি। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সধারনতঃ উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় না। রোগ নির্ণয় হতে হতে প্রায়শই তা দেহের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ৪০ বছর বয়সের আগে হয় না বললেই চলে আর অগ্নাশয়ের আডেনোকারসিনোমার অর্ধেকই হয় ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিসমূহের মধ্যে আছে ধূমপান, স্থূলতা, বহুমূত্র, কিছু দুর্লভ বংশগত রোগ। প্রায় ২৫% ক্ষেত্রে ধূমপান জড়িত,৫-১০% জীনগত। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার নির্ণীত হয় মেডিকেল ইমেজিং পদ্ধতি যেমন আলট্রাসনোগ্রাফি, কম্পিউটেড টমোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা, কলার নমুনা পরীক্ষার (বায়োপ্সি) মাধ্যমে। এই রোগকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা যায়, প্রাথমিক (স্তর ১) থেকে শেষ (স্তর ৪) পর্যন্ত। সাধারনের জন্য এই রোগের স্ক্রিনিং কার্যককরী নয়।
অধুমপায়ী যারা স্বাভাবিক ওজনের এবং লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খায় না তাদের মধ্যে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম। রোগ হবার সম্ভাবনা ধূমপান ছাড়ার ২০ বছর পর অধুমপায়ীর সমপর্যায়ে চলে আসে। শল্য চিকিৎসা, রেদিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, উপশমক চিকিৎসা বা সবগুলোর সমন্বয়ে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়য। চিকিৎসা মূলত ক্যান্সারের স্তরের উপর নির্ভর করে। শল্য চিকিৎসা হচ্ছে একমাত্র চিকিৎসা যা অগ্নাশয়ের আডেনোকারসিনোমা নির্মূল করতে পারে,এবং নির্মূল সম্ভব না হলেও জীবনের মান উন্নত করতে পারে। ব্যথা নিরাময় এবং হজমে সাহায্যকারী ওষুধ লাগতে পারে। নির্মূলের লক্ষ্য থাকলেও উপশমক চিকিৎসা দিতে হবে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ২০১২ সালে বিশ্বে ৩৩০,০০০ মৃত্যু ঘটিয়েছে যা ক্যান্সারে মৃত্যুর সপ্তম কারণ। যুক্তরাজ্যে ক্যান্সারে মৃত্যুর পঞ্চম কারণ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার। যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ। রোগটি বেশি হয় উন্নত দেশগুলোতে, যেখানে ২০১২ সালে ৭০% অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হয়। অগ্নাশয়ের আডেনোকারসিনোমার পূর্বাভাস খুব খারাপ,রোগ নির্ণয়ের পর ২৫% রোগী এক বছর এবং ৫% পাঁচ বছর বাঁচে। আগে আগে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় ২০%। নিউরএণ্ডোক্রাইন টিউমারের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ভালো, নির্ণয়ের পাঁচ বছর পর ৬৫%, যদিও বেঁচে থাকা নির্ভর করে ধরনের উপর।