টমাস লিখিত সুসমাচার
From Wikipedia, the free encyclopedia
টমাস লিখিত সুসমাচার (কিবতীয়: ⲡⲉ̅ⲩ̅ⲁ̅ⲅⲅ̅ⲉⲗ̅ⲓⲟⲛ̅ ⲡⲕ̅ⲁ̅ⲧⲁ ⲑ̅ⲱ̅ⲙⲁⲥ; গ্রিক: Ευαγγέλιο του Θωμά; মালয়ালম: തോമായുടെ സുവിശേഷം) হল একটি অপ্রামাণিক উপদেশমূলক সুসমাচার। এটি টমাস লিখিত কপ্টীয় সুসমাচার নামেও পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মিশরের নাগ হামাদির কাছে একগুচ্ছ গ্রন্থের সঙ্গে এটিও আবিষ্কৃত হয়। এই গ্রন্থগুলি "নাগ হামাদি গ্রন্থাবলি" নামে পরিচিত। গবেষকেরা অনুমান করেন, বিশপ এথেনিসিয়াস একটি চিঠিতে খ্রিস্টীয় শাস্ত্রের সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্দিষ্ট এক প্রামাণ্য রূপ ঘোষণা করলে তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই গ্রন্থাবলি সমাহিত করা হয়।[1][2]
আধুনিক যুগের গবেষকেরা কিবতীয় ভাষায় লিখিত এই গ্রন্থাবলির যে অংশটিকে কোডেক্স ২ নামে চিহ্নিত করেন, তার সাতটি পুস্তকের মধ্যে এই দ্বিতীয় পুস্তকটিতে নাসরতীয় যীশুর উপদেশ বলে উল্লিখিত ১১৪টি উক্তি রয়েছে।[3] এই উক্তিগুলির প্রায় অর্ধেকই ধর্মসম্মত সুসমাচারগুলিতে পাওয়া যায়। অনুমান করা হয়, অন্যান্য উক্তিগুলি এসেছে নস্টিক প্রথা থেকে।[4] এগুলির উৎসস্থল সম্ভবত সিরিয়া। সেখানে টমাসীয় প্রথা খুব শক্তিশালী ছিল।[5]
ভূমিকাংশে বলা হয়েছে: "এগুলি হল [সেই] গোপন উক্তিসমূহ যা পুনরুত্থিত যীশু বলেছিলেন এবং দিদিমোস[,] যিহূদা[, ও] টমাস লিপিবদ্ধ করেন।"[6] দিদিমুস (গ্রিক) ও টমাস (আরামীয়) দু’টি শব্দেরই অর্থ "যমজ"। পুস্তকটির রচয়িতা হিসাবে প্রেরিত শিষ্য টমাসের নাম উল্লেখ করা হলেও আধুনিক গবেষকেরা এই ধারণাটি স্বীকার করেন না।[7]
মনে করা হয়, এই নথিগুলির উৎস আদি খ্রিস্টানদের, সম্ভবত প্রোটো-নস্টিকদের সম্প্রদায়ের মধ্যে।[8] কোনও কোনও সমালোচকের মতে, এই পুস্তকটি নাগ হামাদিতে অন্যান্য নস্টিক গ্রন্থাবলির সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে; এবং এই ব্যাপারটি ছাড়া অন্য কোনও দিক থেকে টমাস লিখিত সুসমাচারটিকে একটি "নস্টিক" সুসমাচার হিসাবে বর্ণনা করা যায় না।[9] টমাসের নামটি আরও দু’টি পুস্তকের সঙ্গে যুক্ত। এগুলি হল নাগ হামাদি কোডেক্স ২-এর অন্তর্গত প্রতিযোগী টমাসের পুস্তক এবং অন্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত টমাসের প্রচার। টমাস লিখিত সুসমাচারে যীশুর দৈব সত্ত্বাটিকে প্রতি প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশ করা না হলেও সরাসরি তার বিরুদ্ধেও কিছু বলা হয়নি। এই পুস্তকে উল্লিখিত হয়েছে যে, যিশুকে যখন তাঁর পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় তাঁর শিষ্যদের বলেন যে, তাঁরা কেন তাঁদের সম্মুখে যিনি উপস্থিত তাঁকে দেখছেন না। একই ধরনের পংক্তির উল্লেখ পাওয়া যায় প্রামাণিক সুসমাচার যোহন ১২:১৬ ও লূক ১৮:৩৪-এ।
টমাস লিখিত সুসমাচারটির ভাব ও রচনাভঙ্গি নূতন নিয়মের অন্যান্য অপ্রামাণিক পুস্তকাবলি ও চারটি প্রামাণ্য সুসমাচারের থেকে অনেকটাই আলাদা। অন্যান্য প্রামাণিক সুসমাচারে যীশুর জীবন সম্পর্কে আখ্যানমূলক বৃত্তান্ত বর্ণিত হলেও টমাস লিখিত সুসমাচারে তা নেই। বরং এই সুসমাচারটি যীশুর উক্তি হিসাবে উল্লিখিত লজিয়া উপদেশাবলি বর্ণিত হয়েছে। এই উপদেশগুলি কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে উক্ত হয়েছে; আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে এগুলি ছোটো ছোটো সংলাপ বা নীতিগর্ভ রূপক কাহিনির মধ্যে গ্রথিত হয়েছে। এই পুস্তকের ৬৫ নং লজিয়নে পরোক্ষে যীশুর মৃত্যু সম্পর্কে একটি সম্ভাব্য উল্লেখ পাওয়া যায়।ref>DeConick, April D., The Original Gospel of Thomas in Translation, 2006, p. 214</ref> (দুষ্ট প্রজার নীতিকথা, সাইনপটিক সুসমাচারে প্রাপ্ত সমান্তরাল কাহিনি)। তবে এই পুস্তকে তাঁর ক্রুশারোপণ, পুনরুত্থান বা শেষ বিচার সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি; এমনকি যীশুকে মশীহ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়নি।[10][11] পুস্তকটি আবিষ্কারের পর থেকে অনেক গবেষকটিকে দেখেছেন তথাকথিত কিউ সূত্রের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ হিসাবে। উল্লেখ্য, এই কিউ সূত্র গঠনভঙ্গির দিক থেকে সম্ভবত যীশুর কার্যাবলি, জীবনকথা বা মৃত্যুর বৃত্তান্ত ব্যতিরেকে সংকলিত তাঁর উক্তি সংকলন বা তথাকথিত একটি "উপদেশমূলক সুসমাচার"-এর অনুরূপ।[12]
বিশপ এউসেবিয়াস এটিকে এমন একটি গ্রন্থ-সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করেন, যেগুলিকে তিনি শুধুমাত্র মেকিই নয়, বরং "উৎপথগামীদের পরিকল্পিত" বলেও বিশ্বাস করতেন। যদিও এক্ষেত্রে তিনি টমাস লিখিত এই সুসমাচারটির কথা উল্লেখ করেছেন না টমাসের নামে প্রচলিত অন্য কোনও একটি পুস্তকের কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়।[13]