দীর্ঘস্থায়ী শক্তি
From Wikipedia, the free encyclopedia
শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই বলা হয় যদি তা "ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের ক্ষমতা নষ্ট না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে পারে।"[1][2] টেকসই শক্তির অধিকাংশ সংজ্ঞায় পরিবেশগত দিক যেমন গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক যেমন শক্তি স্বল্পতার মতো বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বায়ু, জলবিদ্যুৎ, সৌর ও ভূ-তাপীয় শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসের তুলনায় সাধারণত অনেক বেশি টেকসই। তবে, কিছু নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প, যেমন জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বনভূমি উজাড় করা, মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।
টেকসই শক্তির ক্ষেত্রে অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের ভূমিকা বিতর্কিত। পারমাণবিক শক্তি একটি নিম্ন-কার্বন উৎস যার ফলে সৃষ্ট ঐতিহাসিক মৃত্যুহার বায়ু ও সৌর শক্তির ফলে সৃষ্টি মৃত্যহারের অনুরূপ। তবে এর টেকসইতার ব্যাপারে বিতর্ক থেকে যায় কারণ এটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার এবং দুর্ঘটনার উদ্বেগ সৃষ্টি করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসে জ্বালানি পরিবর্তন করলে পরিবেশের উপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার মধ্যে জলবায়ুতে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হওয়া অন্যতম। কয়লার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ। তাই কয়লার পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার জলবায়ুগত প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যদিও প্রাকৃতিক গ্যাস কয়লা অপেক্ষা কম ক্ষতিকর, তাও এটি একটি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং এটিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে কয়লার চেয়ে কম খারাপ বিকল্প হিসেবে দেখার ফলে সত্যিকারের স্থায়ী জ্বালানি (নবায়নযোগ্য) উৎস, যেমন সৌর এবং বায়ু শক্তিতে বিনিয়োগ ও এগুলোর ব্যাপক প্রয়োগে অনীহা তৈরি হতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কার্বন ক্যাপচার এন্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি স্থাপন করে তাদের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO
২) নির্গমন দূর করা সম্ভব, তবে এটি ব্যয়বহুল এবং খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বের ৮৫% শক্তি খরচের যোগান দেয় এবং এই শক্তি ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৭৬% এর জন্য দায়ী। উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং প্রায় ২.৬ বিলিয়ন রান্নার জন্য কাঠ বা কয়লার মতো দূষণকারী জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হলে শক্তি উৎপাদন, বিতরণ, সঞ্চয় এবং ব্যবহারের পদ্ধতিতে একটি সিস্টেম-ব্যাপী রূপান্তরের প্রয়োজন হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়োমাস পোড়ানো বায়ু দূষণের একটি প্রধান অবদানকারী, যার ফলে প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। তাই, কম-কার্বন শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর হলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর উপকারী প্রভাব থাকবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে আনার সময়, জলবায়ু লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সার্বজনীন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিরাপদ রান্নার সুযোগ দেওয়ার উপায় বিদ্যমান।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যে এমন কিছু উপায় প্রস্তাব করা হয়েছে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। এই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা, বায়ু ও সৌরশক্তির মতো পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, এবং পরিবহন ও ভবনে উত্তাপের মতো ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে পরিবর্তিত হওয়া। কিছু শক্তি-নিবিড় প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া যেগুলোর বৈদ্যুতিকরণ কঠিন, সেগুলোর ক্ষেত্রে বহু উপায়ে কম-নিঃসরণকারী উৎস থেকে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে। অধিক পরিমাণে পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলিকে শক্তি সঞ্চয়ের মতো অবকাঠামোর মাধ্যমে নমনীয় করে তুলতে হবে। নিঃসরণে উল্লেখযোগ্য হ্রাস আনতে, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি, যেমন ভবন এবং পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে পরিবর্তন করা এবং শক্তি সংরক্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শক্তি সম্পর্কিত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি এখনও পরিপূর্ণ হয়নি।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮.৫% ছিল বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে। এই অংশটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একইসাথে এর ব্যয় হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) সীমাবদ্ধ রাখতে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল (IPCC) অনুমান করে যে, ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর বিশ্ব মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫% শক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
শক্তি খাতের রূপান্তরকে উৎসাহিত করে এমন সঠিকভাবে পরিকল্পিত সরকারি নীতিসমূহ গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করতে পারে। বহু ক্ষেত্রে, এগুলো শক্তি নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করে। এই নীতিগত পন্থাগুলির মধ্যে রয়েছে কার্বন মূল্য নির্ধারণ, নবায়নযোগ্য শক্তির পোর্টফোলিও মানদণ্ড, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকির পর্যায়ক্রমিক বিলোপ, এবং বিদ্যুতায়ন ও টেকসই পরিবহনকে সমর্থন করার জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন। নতুন পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তির গবেষণা, উন্নয়ন , এবং বিক্ষোভের জন্য অর্থায়ন করাও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।