স্টেগোসরাস
From Wikipedia, the free encyclopedia
স্টেগোসরাস (রোমান হরফ - Stegosaurus) হল এক গোষ্ঠীর বর্মধারী ডাইনোসর। উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমভাগ ও ইউরোপের পর্তুগাল থেকে এদের অস্থির যে জীবাশ্ম আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলি আজ থেকে মোটামুটি ১৫ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ১৫ কোটি বছর পুরনো। অর্থাৎ জুরাসিক যুগের শেষের দিকে এদের অস্তিত্ব ছিল। এরা অর্নিথিস্কিয়া বর্গের এক অত্যন্ত সুপরিচিত ডাইনোসর গোষ্ঠী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মরিসন ফর্মেশনের নিচের দিকের স্তর থেকে এই গণের বেশ কয়েকটি প্রজাতির প্রাণীর জীবাশ্ম মিললেও, এখনও পর্যন্ত এই গণের তিনটি প্রজাতিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে - স্টেগোসরাস স্টেনপ্স্, স্টেগোসরাস আনগুলেটাস ও স্টেগোসরাস সালকেটাস। এখনও পর্যন্ত এইধরনের ৮০টি প্রাণীর জীবাশ্ম বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে পাওয়া গেছে।[1] ২০০৬ সালে পর্তুগালে এই গণের একটি প্রাণীর জীবাশ্ম আবিস্কৃত হওয়ায়[2] এখন বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত যে ইউরোপ ভূখণ্ডেও এই গণের ডাইনোসরদের অস্তিত্ব ছিল।
স্টেগোসরাস সময়গত পরিসীমা: জুরাসিক যুগের শেষভাগ, ১৫.৫–১৫.০কোটি | |
---|---|
স্টেগোসরাস স্টেনপ্স্ - যেমন দেখতে ছিল | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
শ্রেণী: | সরীসৃপ |
মহাবর্গ: | ডাইনোসরিয়া |
বর্গ: | †অর্নিথিস্কিয়া |
উপবর্গ: | স্টেগোসরিয়া |
আদর্শ প্রজাতি | |
†স্টেগোসরাস স্টেনপ্স্ মার্শ, ১৮৭৭ | |
অন্যান্য প্রজাতি | |
| |
প্রতিশব্দ | |
|
এরা আকৃতিতে ছিল বেশ বড়; দৈর্ঘ্যে এরা হত প্রায় ৯ মিটার; স্টেগোসরিয়া অধোবর্গের এখনও পর্যন্ত যেসব প্রাণীর পরিচয় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে এরাই ছিল বৃহত্তম। চতুষ্পদ তৃণভোজী এই প্রাণীর গড়নও ছিল বেশ ভারী; পিঠের দিক ছিল খুবই শক্তিশালী। সামনের পা দু'টি হত অপেক্ষাকৃত ছোট, পিছনের পাদু'টি বড় ও বেশি শক্তিশালী। এর ফলে এদের শ্রোণীচক্রের দিকটা একটু বেশি উপরের দিকে থাকত, সামনের দিকটা হত অপেক্ষাকৃত নিচু। ফলে এদের পক্ষে মাথা নিচু করে মাটির কাছে নামিয়ে এনে খাওয়া সম্ভব হত। এর থেকে ধারণা করা হয়ে থাকে, ছোট ছোট ঝোপঝাড়, লতাগুল্ম, প্রভৃতি ছিল এদের মূল খাদ্য। এদের মাথা ছিল দেহের তুলনায় অস্বাভাবিকরকম ছোট, ঘাড়ের দৈর্ঘ্যও ছিল বেশ কম। এদের পিঠের উপর ১৭টি চতুষ্কোণ প্লেট ও লেজের দিকে বড় বড় কয়েকটি কাঁটা থাকত। এগুলির কাজ কী ছিল, সে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানাধরনের জল্পনা চালু আছে। তবে এগুলির উপস্থিতি এদের চেহারাকে এমন একটা বিশিষ্টতা দান করেছিল যে এদের বর্তমানে টিরানোসরাস, ট্রাইসেরাটপস, আপাটোসরাস, ভেলোসির্যাপটর, প্রভৃতির সঙ্গেই অন্যতম জনপ্রিয় ডাইনোসর হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
১৮৭৭ সালে ওথনিয়েল চার্লস মার্শ যখন প্রথম এদের জীবাশ্ম সনাক্তকরণ করেন[3], তখন এদের যে অস্থি পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল এতটাই ভাঙাচোরা ও অপূর্ণ, তার থেকে এদের দৈহিক গঠন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকরা খুব সঠিক ধারণা গড়ে তুলতে পারেননি। সেই কারণে নানা বইপত্র, সিনেমায় এরা এদের অদ্ভুত চেহারার জন্য যতই জনপ্রিয়তা অর্জন করুক, প্রথমদিকে বিভিন্ন মিউজিয়ামে এদের পূর্ণাবয়ব চেহারা বা কঙ্কাল খুবএকটা স্থান অর্জন করেনি। তবে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ধীরে ধীরে নতুন নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কারের ফলে এদের চেহারা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে শেষপর্যন্ত এদের পূর্ণাবয়ব কঙ্কাল পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে।[4]