মহাবিশ্ব
স্থান, সময়, পদার্থ এবং শক্তি নিয়ে গঠিত সমগ্রতা / From Wikipedia, the free encyclopedia
মহাবিশ্ব হলো অসীম স্থানকাল (spacetime) এবং তাতে যা কিছু আছে তার সবকিছুর সম্মিলিত রূপ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ধরনের অস্তিত্ব, মৌলিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া, ভৌত প্রক্রিয়া, ভৌত ধ্রুবক এবং সেগুলো যেসব কাঠামো তৈরি করে, যেমন- অতিপারমাণবিক কণা থেকে শুরু করে বিশাল গ্যালাক্সি। প্রচলিত বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩.৭৮৭±০.০২০ বিলিয়ন বছর আগে স্থানকালের উদ্ভব হয় এবং তখন থেকেই মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকে। আজ যতটুকু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, তার ব্যাস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ, তবে মহাবিশ্বের পুরো আকার (যদি থেকে থাকে) সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণাগুলো এসেছিল প্রাচীন গ্রিক এবং ভারতীয় দার্শনিকদের থেকে। তাদের মহাজাগতিক মডেলগুলোতে পৃথিবীকে কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে সূক্ষ্ম জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ফলে নিকোলাস কোপারনিকাস সূর্যকেন্দ্রিক মডেল তৈরি করেন যেখানে সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত। বিশ্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র প্রতিষ্ঠা করার সময় আইজ্যাক নিউটন কোপারনিকাসের কাজের উপর ভিত্তি করেই এগিয়েছিলেন, যেমন করেছিলেন জোহানেস কেপলারের গ্রহের গতির সূত্র এবং টাইকো ব্রাহের পর্যবেক্ষণগুলোর উপর।
আরও উন্নত পর্যবেক্ষণের ফলে জানা যায়, সূর্য আকাশগঙ্গার কয়েকশো বিলিয়ন তারার মধ্যে একটি মাত্র, এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে আকাশগঙ্গার মতোই আরও কয়েকশো বিলিয়ন ছায়াপথ রয়েছে। একটি গ্যালাক্সির অধিকাংশ তারাই গ্রহসমূহ ধারণ করে। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কেলে, গ্যালাক্সিগুলি সুষমভাবে ও সকল দিকে সমানভাবে বিতরণ করা হয়েছে। এর অর্থ মহাবিশ্বের কোনো কিনারা বা কেন্দ্র নেই। ছোট স্কেলে গ্যালাক্সিগুলি ক্লাস্টার এবং সুপারক্লাস্টারে বিন্যস্ত যা মহাশূন্যতে বিশাল ফিলামেন্ট আর শূন্যতা তৈরি করে ফেনার মত বিশাল কাঠামো তৈরি করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের আবিষ্কারগুলি থেকে জানা যায় যে মহাবিশ্বের একটি শুরু ছিল এবং এর প্রসারণ সেই সময় থেকে হচ্ছে।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, মূলত যে শক্তি এবং পদার্থ উপস্থিত ছিল তা মহাবিশ্বের প্রসারণের সাথে সাথে কম ঘন হয়ে এসেছে। মাত্র ১০^-৩২ সেকেন্ডের মধ্যে মহাবিশ্বের ত্বরিত প্রসারণ (যাকে inflationary epoch বলা হয়), এরপর চারটি মৌলিক শক্তি পৃথক হয়ে যাওয়ার পর মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে এবং প্রসারিত হতে থাকে। এর ফলে প্রথম উপ-পারমাণবিক কণা এবং সাধারণ পরমাণু তৈরি হতে শুরু করে। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের বিশাল মেঘ ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে সেইসব স্থানে প্রথম গ্যালাক্সি, তারা এবং বর্তমানে আমরা যা যা দেখি তৈরি করে।
পদার্থ এবং আলোর উপর মহাকর্ষের প্রভাব পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, মহাবিশ্বে দৃশ্যমান বস্তুর চেয়ে অনেক বেশি পদার্থ রয়েছে; তারা, ছায়াপথ, নীহারিকা (nebulas) এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ইত্যাদি। এই অদৃশ্য পদার্থকে বলা হয় ডার্ক ম্যাটার (ডার্ক বলতে বোঝায় এর সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ প্রমাণ আছে কিন্তু সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি)। এই ডার্ক ম্যাটার সৃষ্টি হয় বাকি মহাবিশ্বের সাথে সাথেই, এবং ফিলামেন্ট ও শূন্যতার ফেনার মত কাঠামো তৈরি করে অন্যান্য পদার্থকে দৃশ্যমান কাঠামো গঠন করতে সহায়তা করে। ΛCDM মডেল হলো বর্তমানে মহাবিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃত মডেল। এটি বলে যে মহাবিশ্বের প্রায় 69.2%±1.2% ভর-শক্তি হলো ডার্ক এনার্জি, যা মহাবিশ্বের ত্বরিত প্রসারণের জন্য দায়ী এবং প্রায় 25.8%±1.1% হলো ডার্ক ম্যাটার। সাধারণ ('ব্যারিওনিক') পদার্থ মহাবিশ্বের মাত্র4.84%±0.1%। তারা, গ্রহ এবং দৃশ্যমান গ্যাস মেঘ সাধারণ পদার্থের প্রায় 6% গঠন করে।
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অনুমান রয়েছে এবং বলা হয় বিগ ব্যাংয়ের আগে কী ছিল। অনেক পদার্থবিজ্ঞানী ও দার্শনিক এসব বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা থেকে বিরত থাকেন কারণ তাঁরা মনে করেন সেই আদি অবস্থা সম্পর্কে তথ্য কখনোই পাওয়া সম্ভব হবে না। কিছু পদার্থবিজ্ঞানী বহুবিশ্বের (multiverse) হাইপোথিসিস তুলে ধরেন যেখানে আমাদের এই মহাবিশ্ব অনেকগুলো মহাবিশ্বের একটি।