ক্রোয়েশীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ
তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা লাভের জন্য সংঘটিত যুদ্ধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
ক্রোয়েশীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুগত ক্রোয়েট বাহিনী—যেটি সোসালিষ্ট ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া (এসএফআরওয়াই) থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল—এবং সার্ব-নিয়ন্ত্রিত যুগোস্লাভ পিপলস আর্মি (জেএনএ) ও স্থানীয় সার্ব বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, জেএনএ ১৯৯২ সালের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ায় তার যুদ্ধ কার্যক্রম শেষ করে। ক্রোয়েশিয়াতে, যুদ্ধটিকে প্রাথমিকভাবে "হোমল্যান্ড ওয়ার" (ক্রোয়েশীয়: Domovinski rat) ও "বৃহত্তর-সার্বীয় আগ্রাসন" (ক্রোয়েশীয়: Velikosrpska agresija) হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। সার্বীয় সূত্রে, "ক্রোয়েশিয়ায় যুদ্ধ" (সার্বীয় সিরিলীয়: Рат у Хрватској, প্রতিবর্ণীকৃত: Rat u Hrvatskoj) এবং (কদাচিৎ) "ক্রাজিনায় যুদ্ধ" (সার্বীয় সিরিলীয়: Рат у Крајини, প্রতিবর্ণীকৃত: Rat u Krajini) ব্যবহৃত হয়।[13]
ক্রোয়েশীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: যুগোস্লাভ যুদ্ধ | |||||||||
উপরে বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: দুব্রোভনিক অবরোধের সময় দুব্রোভনিকের কেন্দ্রীয় রাস্তা স্ট্রাডুন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল; প্রারম্ভিক সংঘর্ষের একটি প্রতীক ক্ষতিগ্রস্ত ভুকোভা ওয়াটার টাওয়ারে ক্রোয়েশিয়ার পতাকা উড়ছে; ক্রোয়েশীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সার্বীয় ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে; ভুকোভার স্মৃতি সমাধিক্ষেত্র; একটি সার্বীয় টি-৫৫ ট্যাঙ্ক দ্রনিসের রাস্তায় ধ্বংস হয়ে গেছে | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
১৯৯৪–৯৪:
|
১৯৯৪–৯২:
| ||||||||
১৯৯৪–৯৫:
| |||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||||
| |||||||||
শক্তি | |||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
৭,১৩৪ জন মৃত বা নিখোঁজ
|
সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্রোয়াটরা চেয়েছিল যে ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়া ছেড়ে একটি সার্বভৌম দেশ হয়ে উঠুক, যখন সার্বিয়া দ্বারা সমর্থিত ক্রোয়েশিয়ায় বসবাসকারী জাতিগত বহু সার্ব[14][15] বিচ্ছিন্নতার বিরোধিতা করেছিল এবং সার্বিয়ার সঙ্গে সার্ব-দাবীকৃত ভূমিসমূহকে একটি সাধারণ রাষ্ট্র হিসাবে রাখতে চেয়েছিলেন। বেশিরভাগ সার্বরা যুগোস্লাভ ফেডারেশনের মধ্যে একটি নতুন সার্ব রাষ্ট্র চেয়েছিল, যার মধ্যে ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার এলাকাসমূহ সহ জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ সার্ব বা উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু ছিল,[16][17] এবং যতটা সম্ভব ক্রোয়েশিয়া জয় করার চেষ্টা করেছিল।[18] ক্রোয়েশিয়া ১৯৯১ সালের ২৫শে জুন স্বাধীনতা ঘোষণা করে, কিন্তু ১৯৯১ সালের ৮ই অক্টোবরে ব্রিওনি চুক্তির মাধ্যমে এটি স্থগিত করতে ও যুগোস্লাভিয়ার সাথে সমস্ত অবশিষ্ট সম্পর্ক ছিন্ন করতে সম্মত হয়।
জেএনএ প্রাথমিকভাবে সমগ্র ক্রোয়েশিয়া দখল করে ক্রোয়েশিয়াকে যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছিল।[19] এটি ব্যর্থ হওয়ার পর, সার্ব বাহিনী ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে স্ব-ঘোষিত আধা-রাষ্ট্র সার্বীয় ক্রাজিনা প্রজাতন্ত্র (আরএসকে) প্রতিষ্ঠা করে, যা লগ বিপ্লবের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে যুদ্ধবিরতি ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ক্রোয়েশিয়া প্রজাতন্ত্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পর, যুদ্ধক্ষেত্রসমূহ ট্রেঞ্চ খনন করে রক্ষা করা হয়েছিল, জাতিসংঘের সুরক্ষা বাহিনী (ইউএনপিআরওএফওআর) মোতায়েন করা হয় এবং পরবর্তী তিন বছরে যুদ্ধ অনেকটা বিরতিহীন হয়ে পরে। সেই সময়ে, আরএসকে ১৩,৯১৩ বর্গ কিলোমিটার (৫,৩৭২ বর্গ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা ক্রোয়েশিয়ার এক চতুর্থাংশেরও বেশি। ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৫ সালে অপারেশন ফ্ল্যাশ ও অপারেশন স্টর্ম নামে পরিচিত দুটি বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করে; এই আক্রমণসমূহ কার্যকরভাবে যুদ্ধকে তার পক্ষে সমাপ্ত করে। জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত অবশিষ্ট পূর্ব স্লাভোনিয়া, বারাঞ্জা ও পশ্চিম সিরমিয়াম (ইউএনটিএইএস) অঞ্চল ১৯৯৮ সালের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ক্রোয়েশিয়াতে পুনঃএকীভূত হয়।
যুদ্ধটি ক্রোয়েশীয় বিজয়ের সাথে শেষ হয়েছিল, কারণ এটি যুদ্ধের শুরুতে ঘোষিত লক্ষ্য “স্বাধীনতা ও সীমানা সংরক্ষণ”কে অর্জন করেছিল। আনুমানিক $৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, হারানো আউটপুট ও শরণার্থী-সম্পর্কিত ব্যয়ের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার অর্থনীতির আনুমানিক ২১-২৫% ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধে ২০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, এবং উদ্বাস্তুরা উভয় দিকে বাস্তুচ্যুত হয়। সার্ব ও ক্রোয়েশীয় সরকার পরস্পরকে ক্রমান্বয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করে, কিন্তু আংশিকভাবে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) ও একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিটি দেশ দ্বারা দায়ের করা মামলার কারণে উত্তেজনা রয়েগেছে।
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) ২০০৭ সালে একটি "একীভূত সার্বীয় রাষ্ট্র" তৈরি করার জন্য স্লোবোদান মিলোশেভিচ ও অন্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করার অপরাধে ক্রোয়েশিয়ার সার্ব নেতাদের একজন মিলান মার্টিচকে দোষী সাব্যস্ত করে।[20] আইসিটিওয়াই ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অপারেশন স্টর্ম সম্পর্কিত অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্রোয়েশীয় জেনারেল আন্তে গোতোভিনা, ম্লাদেন মার্কাচ ও ইভান চেরমাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ইভান চেরমাকে সরাসরি খালাস এবং আন্তে গোতোভিনা ও ম্লাদেন মার্কাচকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, পরে একটি আইসিটিওয়াই আপিল প্যানেল দ্বারা রায় বাতিল করা হয়।[21][22] আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ার দ্বারা গণহত্যার পারস্পরিক দাবি খারিজ করে। আদালত পুনর্নিশ্চিত করেছে, যে বিস্তৃতভাবে বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু এটির অধীনে নির্দিষ্ট গণহত্যার অভিপ্রায় ছিল না।[23]