গ্রানাডা যুদ্ধ
From Wikipedia, the free encyclopedia
গ্রানাডা যুদ্ধ (স্পেনীয়: Guerra de Granada) ১৪৮২ থেকে ১৪৯২ সাল মধ্যকার ক্যাথলিক রাজাদের শাসনামলে সংঘটিত কাস্তিলের রাণী প্রথম ইসাবেলা ও আরাগনের রাজা ফার্ডিনান্ড কর্তৃক গ্রানাডার নাসরি রাজবংশের আমিরাতের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি সম্মিলিত ধারাবাহিক সামরিক অভিযান ছিল। এটি গ্রানাডা আমিরাতের পরাজয় ও সেটি কাস্তিলে সংযুক্তির সাথে শেষ হয় এবং এটিই ইবেরীয় উপদ্বীপে ইসলামি শাসনের শেষ অবশিষ্টাংশের অবসান ঘটায়। এরপর থেকে মুসলমানদের স্পেন থেকে বিতাড়িত করা হয় বা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার শর্তে স্পেনে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়।[2]
গ্রানাডার যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: রিকনকোয়েস্টা | |||||||
গ্রানাডার আত্মসমর্পণ; এফ. প্রদিলা দ্বারা অঙ্কিত: ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলার কাছে ত্রয়োদশ মুহম্মদ আত্মসমর্পণ করছে। | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
সম্মিলিত কাস্তেল ও আর্গন রাজ্য | গ্রানাডা আমিরাত | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
ফার্ডিনার্ড রাণী ইসাবেলা |
আবুল হাসান আলি † ত্রয়োদশ মুহাম্মদ † দ্বাদশ মুহাম্মদ (আত্মসমর্পণ) | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
অজানা | ১০০,০০০ নিহত অথবা দাসত্ববরণ (বেসামরিক লোকসহ)[1] |
ক্রমাগত প্রচেষ্টায় উভয়ের মাঝে দশ বছরের যুদ্ধ হয়নি বরং এটি মৌসুমী অভিযানের একটি ধারাবাহিকতা ছিল, এটি বসন্তে শুরু হয় এবং শীতকালে বন্ধ হয়ে যায়। গ্রানাডীয়রা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধের কারণে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, অন্যদিকে খ্রিস্টানরা সাধারণত একত্র ছিল। এছাড়া গ্রানাডা আমিরাত করের দ্বারাও অর্থনৈতিকভাবে রক্তাক্ত হয়েছিল; আক্রমণ ও পরাজিত হওয়া এড়াতে তাদের কাস্তিলকে নিয়মিত অর্থ প্রদান করতে হত। এই যুদ্ধে খ্রিস্টান সৈন্যদের কামানের কার্যকর ব্যবহার করতে দেখা যায় যা দ্রুত শহরগুলি জয় করার কাজে তাদের সাহায্য করে, অন্যথায় তাদের দীর্ঘ অবরোধের প্রয়োজন হত। ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারিতে গ্রানাডার তৎকালীন রাজা মুহম্মদ দ্বাদশ (যিনি রাজা আবু আব্দুল্লাহ নামেও পরিচিত) গ্রানাডা শহর ও আল হামরা প্রাসাদসহ গ্রানাডা আমিরাত কাস্তিলীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এই যুদ্ধ কাস্তিলের রাণী ইসাবেলা ও আরাগণের রাজা ফার্ডিনান্ডের একটি যৌথ প্রকল্প ছিল। যুদ্ধের জন্য সিংহভাগ সৈন্য ও তহবিল কাস্তিল থেকে এসেছিল এবং এর বিনিময়ে পরবর্তীতে গ্রানাডাকে কাস্তিলের অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং যুদ্ধে আরাগনের রাজার ভূমিকা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল: রাজা ফার্ডিনান্ডের উপস্থিতি ছাড়াও তারা নৌ সহযোগিতা, বন্দুক ও কিছু আর্থিক ঋণ প্রদান করে। যখন ফার্ডিনান্ড এবং ইসাবেলা তাদের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত ও সুসংহত করার চেষ্টা করে তখন যুদ্ধে অভিজাতদের নতুন জমির লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।
যুদ্ধের পর ইবেরীয় উপদ্বীপে ধর্মের মধ্যে সহাবস্থানের অবসান ঘটে যা ইতোপূর্বে মুসলিম আমলে প্রচলিত ছিল। ১৪৯২ সালে ইহুদিদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বা নির্বাসিত হতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ১৫০১ সালের মধ্যে গ্রানাডার সমস্ত মুসলমান খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছিল অথবা তাদের দাস হতে হয়েছিল বা নির্বাসিত হয়েছিল। ১৫২৬ সালের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা স্পেনের বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রানাডার মত স্পেনের অন্যান্য অঞ্চলে মুসলিম ও ইহুদিদের জোরপূর্বক খ্রিস্টানে ধর্মান্তরিত করা হয়। তখন সেখানে "নতুন খ্রিস্টান", লুকায়িত মুসলিম এবং লুকায়িত ইহুদি হওয়ার জন্যও অনেকে অভিযুক্ত হন ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন।[3] খ্রিস্টধর্ম ও ক্যাথলিক ধর্মের অভিভাবক হিসাবে তখন স্পেন নিজের জাতীয় আকাঙ্ক্ষার নমুনা হয়ে এগিয়ে যায়। আল হামরার পতন এখনও প্রতি বছর গ্রানাডা নগর পরিষদ দ্বারা উদযাপিত হয় এবং অতি শোচনীয় বিষয় হিসেবে চর্চিত হওয়া গ্রানাডার সেই যুদ্ধকে ঐতিহ্যবাহী স্পেনীয় ইতিহাসে রিকনকোয়েস্টার চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।