চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন
দৃষ্টিগ্রাহ্য যোগাযোগের উদ্দেশ্যে চিত্র ও পাঠ্য উপাদানের পরিকল্পিত, সুসজ্জিত সমাহার সৃষ্টিকর / From Wikipedia, the free encyclopedia
চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন (ইংরেজি: graphic design গ্রাফিক্ ডিজাইন্) বলতে এমন একটি পেশা,[2] কলা, উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্য বিষয়[3][4][5] বা ফলিত শিল্পকলার ক্রিয়াকলাপকে বোঝায়, যেখানে কোনও একটি পৃষ্ঠতলে মুদ্রাক্ষরসজ্জা, আলোকচিত্রশিল্প ও চিত্রাঙ্কনকলার দক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণত একাধিক সুনির্বাচিত প্রতীক, চিত্র ও পাঠ্যবস্তুর (অক্ষর, শব্দ, ইত্যাদি) পরিকল্পিত মিলন ঘটিয়ে একটি সুসজ্জিত সমাহার সৃষ্টি করে কোনও ধারণা বা বার্তাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ দান করা]] হয়, যার অন্তিম লক্ষ্য নকশাটিকে যান্ত্রিকভাবে পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে সাধারণত বহুসংখ্যক পাঠক-দর্শকের কাছে সেই বার্তাটিকে জ্ঞাপন করা (অর্থাৎ দৃষ্টিনির্ভর গণযোগাযোগ স্থাপন করা)।[6] গ্রাফিক ডিজাইন হল নকশা[1] এবং চারুকলার একটি আন্তঃবিভাগীয় শাখা। এর অনুশীলনে ম্যানুয়াল বা ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং পার্শ্বীয় চিন্তাভাবনা জড়িত, যেখানে দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগের জন্য পাঠ্যবস্তু এবং গ্রাফিক্স ব্যবহার করা স্বাভাবিক।
যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় গ্রাফিক ডিজাইনার বার্তার এনকোডার বা দোভাষী হিসাবে ভূমিকা পালন করে। তারা মূলত দৃষ্টিনির্ভর বার্তাগুলির ব্যাখ্যা, ক্রম এবং উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। সাধারণত, গ্রাফিক ডিজাইন মুদ্রাক্ষরসজ্জার নান্দনিকতা এবং পাঠ্যবস্তুর রচনামূলক বিন্যাস, অলঙ্করণ এবং ধারণা প্রকাশের জন্য চিত্রকল্প ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। ডিজাইনের কাজটি গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে, যা ভাষাগতভাবে, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, অর্থাৎ গ্রাফিক ডিজাইন একটি ভাষাগত বার্তাকে গ্রাফিক প্রকাশে রূপান্তরিত করে।[7]
প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসাবে গ্রাফিক ডিজাইনে, জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যে কোনও ভিজ্যুয়াল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিজ্ঞাপনের কৌশলগুলিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, অথবা এটি বিমান চালনা[8] বা মহাকাশ অনুসন্ধানের[9][10] জগতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই অর্থে, কিছু দেশে গ্রাফিক ডিজাইন শুধুমাত্র স্কেচ এবং অঙ্কন তৈরির সাথে সম্পর্কিত, যদিও এটি ভুল, যেহেতু ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন একটি বিশাল পরিসরের একটি ছোট অংশ যেখানে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রাচীনত্ব এবং মধ্যযুগীয় উৎপত্তির পাশাপাশি, প্রয়োগ শিল্প হিসাবে গ্রাফিক ডিজাইন প্রাথমিকভাবে ১৫ শতকে ইউরোপে মুদ্রণের উত্থান এবং শিল্প বিপ্লবে ভোক্তা সংস্কৃতির বৃদ্ধির সাথে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে এটি পশ্চিমে একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে আবির্ভূত হয়ে, ১৯ শতকে বিজ্ঞাপনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হ্যে উঠে[11] এবং এর বিবর্তন ২০ শতকে এটিকে একীভূত করে। বর্তমানে তথ্য বিনিময়ের দ্রুত এবং ব্যাপক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, অভিজ্ঞ ডিজাইনারদের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এবং তাদের বিকাশকারী প্রকৌশলীদের দক্ষতার বাইরে মানবিক কারণগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন।[12]
এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নকশাটি কোনও ভৌত মাধ্যমে (physical) কিংবা অসদ্ মাধ্যমে (virtual) রূপায়িত হতে পারে, স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদের সময়ের জন্য পরিবেশিত হতে পারে, ক্ষুদ্র একক ডাকটিকিট থেকে শুরু করে জাতীয় ডাকসংকেত ব্যবস্থার মত বিশালায়তন হতে পারে। নকশার উদ্দীষ্ট দর্শকের সংখ্যা সীমিত হতে পারে, যেমন কোন এককালীন প্রদর্শনীর নকশা প্রণয়ন বা সীমিত-প্রকাশনার বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ; আবার এটি লক্ষ কোটি দর্শকের জন্যও তৈরি করা হতে পারে, যেমন কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার ওয়েবসাইটের নকশা। কেবল বাণিজ্যিক নয়, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন করা হতে পারে। চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা প্রাচীরপত্র, বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র, মুদ্রিত বিজ্ঞাপন, মোড়ক ও অন্যান্য মুদ্রিত মাধ্যমের জন্য এবং সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে তথ্য লেখচিত্রণের জন্য নকশা প্রণয়ন করেন।[13]