জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
From Wikipedia, the free encyclopedia
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং মানব সমাজের উপর প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে, আবহাওয়া আরও চরম হচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, মানব বসতি এবং সমাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।[6] মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী। যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না গ্রহণ করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে জলবায়ু সংকট হিসাবে বর্ণনা করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর সব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সমান নয়। বিশেষভাবে, অধিকাংশ ভূমিভাগ মহাসাগরের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয়েছে। উত্তর মেরুর অঞ্চলে (আর্কটিক) জলবায়ুর তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি হারে বাড়ছে।[7] মহাসাগরের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাব। এর মধ্য রয়েছে মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মহাসাগর উষ্ণ হওয়া এবং বরফের গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মহাসাগরে স্তরীভবনের (stratification) বৃদ্ধি, আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন-সহ (AMOC) সামুদ্রিক স্রোতের দুর্বলতা সহ সামুদ্রিক স্রোতের পরিবর্তন।[8]:১০ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ফলে সমুদ্রের পানির অম্লীকরণ ঘটছে।[9]
গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবী দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই উষ্ণায়নের ফলে আমাদের পরিবেশ এবং জীবজগতের উপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।[10]:৮১ তাপমাত্রা বৃদ্ধি মাটি শুষ্ক করে ফেলছে এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর ফলে ভূমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে।[11]:৯ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির জীব বেঁচে থাকার জন্য শীতল অঞ্চলের দিকে পরিযায়ন করছে। স্থলভাগের অনেক প্রজাতি উঁচু অঞ্চলে চলে যাচ্ছে যেখানে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। সামুদ্রিক প্রাণীরা গভীর সমুদ্রে আশ্রয় নিচ্ছে যেখানে পানি ঠান্ডা।[12] যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ °C (৩.৬ °F) বেড়ে যায়, প্রায় ১০% স্থলজ প্রজাতি মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে।[13]:২৫৯
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার পানির উৎস হুমকির মুখে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা জনিত সমস্যা (heat stress) সরাসরি স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, আবার সংক্রামক ব্যাধির বিস্তারের মাধ্যমেও পরোক্ষভাবে ক্ষতি করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন সকলের উপর সমভাবে প্রভাব ফেলে না। কিছু অর্থনৈতিক খাত এবং কিছু দেশ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যারা এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী, অর্থাৎ ধনী শিল্পোন্নত দেশগুলো, তারাই সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করেছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত সম্পদও রয়েছে। ফলে ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তারা অন্যদের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। এ কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব তাদের ওপর সবচেয়ে কম পড়ে।[14] জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি, মৎস্য শিকার, বনজ সম্পদ, জ্বালানি, বীমা এবং পর্যটনসহ অনেক অর্থনৈতিক খাতকে প্রভাবিত করে। দরিদ্র, নারী, শিশু এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মতো কিছু জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।[15]:৭৯৬[16]:৩৭৩–৩৭৬ এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ নিজ বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য হতে পারে এবং জনগণের অভিবাসনের ধারা বদলে যেতে পারে।[17]