টাইপ ২ ডায়াবেটিস
দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস জনিত বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ / From Wikipedia, the free encyclopedia
ডায়াবেটিস মেলিটাস টাইপ-২ (ইংরেজি: Diabetes mellitus type 2) একটি বিপাকীয় রোগ যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। রক্তে শর্করার আধিক্য, ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও শরীরে ইনসুলিনের আপেক্ষিক ঘাটতি প্রভৃতি এই রোগের বৈশিষ্ট্য।[6] সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অত্যধিক তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া), ঘনঘন প্রস্রাব (পলিইউরিয়া) ও ওজন হ্রাস। [3] এছাড়া ক্ষুধাবৃদ্ধি(মিষ্টি খাবারের প্রতি অত্যধিক আসক্তি) , ক্লান্তি অনুভব ও ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হওয়াও এর লক্ষণ। [3] উপসর্গগুলো প্রায়শই ধীরেধীরে প্রকাশ পায়।[6]
টাইপ ২ ডায়াবেটিস | |
---|---|
প্রতিশব্দ | নন-ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস।(NIDDM),অ্যাডাল্ট অনসেট ডায়াবেটিস। [1] |
ডায়াবেটিসের সর্বজনীন নীল বৃত্ত প্রতীক[2] | |
উচ্চারণ | |
বিশেষত্ব | এন্ডোক্রাইনোলজি |
লক্ষণ | অত্যধিক তৃষ্ণা, ঘনঘন প্রস্রাব, ওজন হ্রাস, ক্ষুধাবৃদ্ধি[3] |
জটিলতা | হাইপারঅসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, কিডনি বিকলতা, অঙ্গহানি। [1][4][5] |
রোগের সূত্রপাত | মধ্যবয়সী বা প্রবীণদের। [6] |
স্থিতিকাল | দীর্ঘ মেয়াদি। [6] |
কারণ | অতিস্থূলতা, পরিশ্রমের অভাব, বংশানুক্রমিক রোগের ইতিহাস।[1][6] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | রক্ত পরীক্ষা। [3] |
প্রতিরোধ | ওজন স্বভাবিক রাখা , শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। [1] |
চিকিৎসা | খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, মেটফরমিন, ইনসুলিন, ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি।[1][7][8][9] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | আয়ুষ্কাল প্রায় দশ বছর পর্যন্ত কমতে পারে।[10] |
সংঘটনের হার | ৩৯২ মিলিয়ন বা ৩৯ কোটি ২০ লাখ। (২০১৫)[11] |
রক্তে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতি অনেক দীর্ঘস্থায়ী জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে যেমন, হৃৎপিণ্ডের রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (যা অন্ধত্ব ঘটাতে পারে), কিডনি বিকলতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতা যা অঙ্গহানির কারণ হতে পারে। [1] সহসা রক্তের শর্করা বৃদ্ধি পেয়ে হাইপার অসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তবে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কম। [4][5]
প্রাথমিকভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ হল অতিস্থূলতা ও শারিরীক পরিশ্রমের অভাব। [1] কিছু কিছু ব্যক্তি বংশীয়ভাবে এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। [6] মোট ডায়াবেটিস রোগীর প্রায় নব্বই শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাকি দশ শতাংশ প্রাথমিকভাবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। [1] টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শরীরের মোট ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় ফলে শর্করার সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়।[12][13] রক্তের শর্করার মাত্রা নির্ণায়ক বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় করা হয়।[3]
টাইপ-২ ডায়াবেটিস আংশিক প্রতিরোধ যোগ্য। ওজন স্বভাবিক রাখা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। [1] এর প্রাথমিক চিকিৎসা হল ব্যায়াম ও ডায়াবেটিক পথ্য।[1] এভাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে ওষুধের কথা চিন্তা করা হয়। [7][14] কতক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। [9] যারা ইনসুলিন নিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষার প্রয়োজন হয় তবে যারা ওষুধ সেবন করে তাদের ক্ষেত্রে এটার প্রয়োজন নাও হতে পারে। [15] স্থূলকায় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। [8][16]
১৯৬০ সাল হতে স্থূলতার সাথে সমান্তরালভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। [17] ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কোটি ২০ লাখ ব্যক্তির ডায়াবেটিস শনাক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি।[11][18] সাধারণত এই রোগ মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধদের হয়,[6] যদিও ইদানীং আশংকাজনক হারে তরুণরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। [19][20] টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে আয়ুষ্কাল দশ বছর পর্যন্ত কমতে পারে।[10] ডায়াবেটিস ছিল প্রথম বর্ণনাকৃত রোগগুলোর মধ্যে একটা। [21] এই রোগে ইনসুলিনের গুরুত্ব নির্ধারিত হয় ১৯২০ সালে। [22]