তাপগতিবিজ্ঞান
পদার্থবজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তাপ ,তাপমাত্রা ও গতির মাঝে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে / From Wikipedia, the free encyclopedia
তাপগতিবিজ্ঞান (ইংরেজি: Thermodynamics) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তাপশক্তি ও তাপমাত্রা এবং এরসাথে শক্তি ও কাজের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাপগতিবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলো বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সমস্ত শাখায় মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাপগতিবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় ধারণা হল বৃহৎ সিস্টেম বা তাপগতীয় সিস্টেম (macroscopic system)। বৃহৎ সিস্টেম বলতে জ্যামিতিকভাবে পৃথক করা যায় এমন একটি পদার্থ-অংশকে বোঝায়, যার ধর্মগুলোকে তাপমাত্রা, চাপ, এনট্রপি, আভ্যন্তরীণ শক্তি, এনথ্যালপি, গিবস্ মুক্ত-শক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করা যায়। সেই জ্যামিতিক গণ্ডির বাইরে বিশ্বের (universe) যে অংশ, তাকে পরিবেশ বলে। যদি সিস্টেমটি কোন অসীম, অনুত্তেজিত পরিবেশের সহাবস্থানে থাকে, তাহলে সেই পরিবেশকে রিজার্ভয়ার (reservoir) বলে। এই পরিবেশের আচরণ তাপগতিবিদ্যার চারটি নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা পরিমাপযোগ্য। আণুবীক্ষণিক ভৌত পরিমাপ ব্যবহার করে একটি পরিমাণগত বিবরণ প্রদান করা যায়, কিন্তু পরিসংখ্যানগত বলবিদ্যা দ্বারা আণুবীক্ষণিক উপাদানগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
তাপগতিবিদ্যা বিজ্ঞান বিভিন্ন বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য যেমন: প্রকৌশল, বায়োকেমিস্ট্রি, রাসায়নিক প্রকৌশল, যান্ত্রিক প্রকৌশল এবং বিশেষ করে ভৌত রসায়ন। তবে অন্যান্য জটিল ক্ষেত্রে যেমন আবহাওয়াবিদ্যার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।[1]
ঐতিহাসিকভাবে, তাপগতিবিদ্যা প্রাথমিক বাষ্প ইঞ্জিনগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানোর উদ্দ্যেশে বিকশিত হয়েছিল, বিশেষ করে ফরাসি পদার্থবিদ নিকোলাস লিওনার্দ সাদি কার্নোটের (১৮২৪) কাজের মাধ্যমে, যিনি বিশ্বাস করতেন যে ইঞ্জিনের কার্যকারিতা হল মূল চাবিকাঠি যা ফ্রান্সকে নেপোলিয়নীয় যুদ্ধে জয়ী হতে পারে।[2] স্কটস-আইরিশ পদার্থবিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন ১৮৫৪ সালে সর্বপ্রথম তাপগতিবিদ্যার একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা প্রণয়ন করেন: তাপ-গতিবিদ্যা হল কোনো পদার্থের দেহ সংলগ্ন অংশগুলোর মধ্যে কাজ করা শক্তির সাথে তাপের সম্পর্ক ও বৈদ্যুতিক শক্তির সাথে তাপের সম্পর্ক।"[3]
যান্ত্রিক তাপ ইঞ্জিনে তাপগতিবিদ্যার প্রাথমিক প্রয়োগ যা রাসায়নিক যৌগ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার অধ্যয়ন দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল। রাসায়নিক তাপগতিবিদ্যা, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এনট্রপির অবস্থা ও প্রকৃতি অধ্যয়ন করে যা তাপগতিবিদ্যার সম্প্রসারণ ও এ সম্পর্কিত জ্ঞানের সিংহভাগ আবিষ্কৃত হয়েছে যা থেকে পরবর্তিতে তাপগতিবিদ্যার অন্যান্য সূত্রের আবিষ্কার হয়। পরিসংখ্যানগত তাপগতিবিদ্যা বা পরিসংখ্যানগত বলবিদ্যার ক্ষেত্রে উত্তেজিত কণাদের আণুবীক্ষণিক আচরণ থেকে কণার সম্মিলিত গতির সম্পর্কে ধারণা করা হয়েছিল। ১৯০৯ সালে, কনস্ট্যান্টিন ক্যারাথিওডোরি একটি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রে একটি সম্পূর্ণ গাণিতিক পদ্ধতির উপস্থাপন করেছিলেন। এবং সেই গাণিতিক পদ্ধতির ব্যাখ্যাকে প্রায়শই জ্যামিতিক তাপগতিবিদ্যা হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[4][5][6][7][8]
ভারসাম্যাবস্থায় সিস্টেমটি তাপমাত্রা (T), চাপ (P) ও আয়তন (V) -এর মত কিছু পরিমাপযোগ্য বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে বর্ণনা করা যায়। এগুলো তাপগতীয় স্থানাঙ্ক হিসেবে পরিচিত। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক স্থানাঙ্ক, যেমন:– ঘনত্ব, আপেক্ষিক তাপ, সংকোচনীয়তা, তাপীয় প্রসারাংক, ইত্যাদি চিহ্নিত ও তুলনা করে পরিবশের সাথে বস্তুটির সম্পর্ক আরও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা যায়।
সিস্টেমটির ভারসাম্যাবস্থাকে পরিমাপ করার জন্য যে একক ব্যবহৃত হয় তাকে এনট্রপি বলা হয়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, এনট্রপি হচ্ছে সিস্টেমটির মধ্যবর্তী বিশৃঙ্খলা পরিমাপ করার একক। যখন একটি সিস্টেমের এনট্রপি সর্বাধিক হয়, তখন সেটি ভারসাম্যাবস্থায় চলে আসে। আর ভারসাম্যাবস্থার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এই অবস্থায় যে কোন বৃহৎ সিস্টেমের চলকগুলো বিগত পরিবর্তনের অনপেক্ষ হয়ে যায়, আর সময়ের সাথে তারা আর পাল্টায় না।[9]
যখন কোন বৃহৎ সিস্টেম একটি ভারসাম্যাবস্থা থেকে আরেকটি ভারসাম্যাবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তখন বলা হয় একটি তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া প্রত্যাবর্তী, আর অন্যগুলোর প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। ১৯শ শতাব্দীতে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য পরীক্ষণের মাধ্যমে আবিষ্কৃত তাপগতিবৈজ্ঞানিক সূত্রগুলো সমস্ত তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এগুলোর সীমা নির্ধারণ করে।