তুরস্কের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩
From Wikipedia, the free encyclopedia
২০২৩ সালের তুরস্কের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হল ২০২৩ সালের মে মাসে তুরস্কের সংসদীয় নির্বাচনের পাশাপাশি আয়োজিত পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অনুষ্ঠান।[1][2] নির্বাচনে আনুমানিক মোট ৬ কোটি ৪০ লক্ষ তুর্কি নাগরিকের ভোটপ্রদানের অধিকার ছিল, যার মধ্যে ৬ কোটি ৯ লক্ষ তুরস্কে বসবাসরত এবং ৩২ লক্ষ বিদেশে প্রবাসী তুর্কি নাগরিক।[3] ১৯৫০ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের স্মরণে ও সম্মানে ১৪ই মে তারিখটি নির্ধারণ করা হয়। ২০২৩-এ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ভোটে ১ম স্থান অধিকার করলেও ৫০%-এর বেশি ভোট বিজয় করে পরম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হন। তাই ২৮শে মে ২০২৩ তারিখে এরদোয়ান ও প্রথম দফার নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী কেমাল কিলিচদারোলুর মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[4]
এই নিবন্ধটি মেয়াদোত্তীর্ণ। (জুলাই ২০২৩) |
| ||||||||||||||||||||||
জনমত জরিপ | ||||||||||||||||||||||
ভোটের হার | ৮৭.০৪% (প্রথম দফা) ০.৮ পিপি ৮৪.১৫% (দ্বিতীয় দফা) ২.৮৯ পিপি | |||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||||||||||||||||
|
ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন দল (একেপি বা একে পার্টি) দ্বারা মনোনীত প্রার্থী ও তুরস্কের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান "জনতার ঐক্য" (পিপলস অ্যালায়েন্স) নামক রাজনৈতিক জোটের যৌথ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে পুনঃপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যে জোটের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দল (ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি বা এমএইচপি) ও আরও তিনটি ছোট দল। কুর্দি হিজবুল্লাহর সাথে সম্পর্কের জন্য পরিচিত ফ্রি কজ পার্টিকে (এইচইউডিএ পিএআর) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোটটি বিতর্কের সম্মুখীন হয়।[5]
এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টিসহ (সিএইচপি) ছয়টি বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য (নেশন অ্যালায়েন্স) জোটটি সিএইচপি নেতা কেমাল কিলিচদারোলুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়। জোটটি ২০১৭ সালের গণভোটের পর থেকে প্রচলিত রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার পরিবর্তে তুরস্কের সংবিধানকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জোটের অংশ না হলেও কুর্দিপন্থী গ্রিন লেফট পার্টি (ওয়াইএসপি) এবং বৃহত্তর লেবার অ্যান্ড ফ্রিডম অ্যালায়েন্স জোটটি কিলিচদারোলুকে সমর্থন দান করে। নির্বাচনে আরও দুইজন গৌণ প্রার্থী হোমল্যান্ড পার্টির নেতা মুহররেম আনসে এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী পৈতৃক জোটের প্রার্থী সিনান ওগান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রয়োজনীয় ১০০,০০০ স্বাক্ষরে পৌঁছালেও নির্বাচনের তিন দিন আগে আনসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দ্বারা তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপবাদ ও অপপ্রচারের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে তারপরেও তাঁর নাম ব্যালট পত্রে উপস্থিত ছিল।[6] নির্বাচনের প্রথম দফায় এরদোয়ান ও ওগান প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভোট লাভ করেন, যথাক্রমে ৪৯.৫% ও ৫.২%। অন্যদিকে কিলিচদারোলু ৪৪.৯% ও মুহাররেম আনসে ০.৪% ভোট জয় করেন।
নির্বাচনী প্রচারণার মূল বিষয়গুলির কেন্দ্রে ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত তুরস্ক-সিরিয়ার মরণঘাতী ভূমিকম্প, যাতে ৫০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছিল এবং যার কারণে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর আশংকা তৈরি হয়েছিল।[7][8] ভূমিকম্প মোকাবেলায় ধীর প্রতিক্রিয়ার জন্য এরদোয়ানের সরকার সমালোচিত হয়। এছাড়া সমালোচকদের মতে ভূমিকম্পের আগে সরকার কর্তৃক ভূমি ও ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধি লংঘনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য ভবনগুলি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে ও ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা বৃদ্ধি পায়।[9] ২০১৮ সাল থেকে তুরস্কের অর্থনীতিতে ধারাবাহিক সংকটাবস্থা এবং জীবনযাপনের ব্যয়ের দ্রুত বৃদ্ধিও নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। বেশিরভাগ জরিপে ভোটাররা অর্থনীতিকে তাদের উদ্বেগের প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করে।[10]
নির্বাচনী প্রচারণা উচ্চমাত্রায় বিভাজনমূলক ও নেতিবাচক হিসেবে অনুভূত হয়। সরকারপন্থী জোট তুরস্কে এলজিবিটি অধিকার সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নেয়।[11][12] স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সয়লু দাবি করেন যে বিরোধী দল জয়ী হলে তাকে এক ধরনের "কু দেতা" (Coup d'état) তথা বেআইনিভাবে ক্ষমতা জবরদখল হিসেবে গণ্য করা হবে।[13] একই সময়ে বিরোধী গুড পার্টির সদর দপ্তরে মার্চ মাসের শেষের দিকে গুলিবর্ষণ করে আক্রমণ করা হয়।[14] এরজুরুম শহরে নেশন অ্যালায়েন্স থেকে উপ-রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত প্রার্থী ও ইস্তাম্বুলের নগরপ্রধান একরেম আমামোলু নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় বাসের উপর বিক্ষুব্ধ জনতার পাথর ছোঁড়ার শিকার হন।[15] এরদোয়ানপন্থী সমর্থকেরা আন্তালিয়ার নগরপ্রধান মুহিত্তিন ব্যোচেকের নির্বাচনী প্রচারণাকর্মে হামলা চালায় ও একাধিক ব্যক্তিকে আহত করে।[16] গণমাধ্যমে নির্বাচন সম্পর্কিত খবরাখবরের পরিধি সরকারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হয় যে সরকারি দল দেশের গণমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলির ৯০%-ই নিয়ন্ত্রণ করে।[17]