দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান / From Wikipedia, the free encyclopedia
আব্দুল হামিদ অথবা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (উসমানীয় তুর্কি: عبد الحميد ثانی; তুর্কি: II. Abdülhamid; ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮) ছিলেন ৩১ আগস্ট ১৮৭৬ থেকে ২৭ এপ্রিল ১৯০৯ সাল পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান এবং ভঙ্গুর রাজ্যের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগকারী শেষ সুলতান।[3] উসমানীয় সাম্রাজ্যে তিনি যে সময়কাল জুড়ে রাজত্ব করেছেন তা হামিদীয় যুগ নামে পরিচিত। তিনি বিদ্রোহ (বিশেষ করে বলকানে) সহ পতনের একটি সময়কাল তত্ত্বাবধান করছিলেন এবং রুশ সাম্রাজ্যের (১৮৭৭-১৮৭৮) সাথে একটি ব্যর্থ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ও তারপরে ১৮৯৭ সালে গ্রিস রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি সফল যুদ্ধ করেন, যদিও উসমানীয়দের এই প্রাপ্তি পরবর্তীকালীন পশ্চিম ইউরোপীয় হস্তক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত ছিলো।
দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ | |||||
---|---|---|---|---|---|
উসমানীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন | |||||
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান (বাদশাহ) | |||||
রাজত্ব | ৩১ আগস্ট ১৮৭৬ – ২৭ এপ্রিল ১৯০৯ | ||||
তরবারি বন্ধনী | ৭ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ | ||||
পূর্বসূরি | পঞ্চম মুরাদ | ||||
উত্তরসূরি | পঞ্চম মেহমেদ | ||||
উজিরে আজম | তালিকা দেখুন
| ||||
জন্ম | (১৮৪২-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২[1][2] তোপকাপি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য | ||||
মৃত্যু | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮(1918-02-10) (বয়স ৭৫) বেইলারবেয়ি প্রাসাদ, কনস্টান্টিনোপল, উসমানীয় সাম্রাজ্য | ||||
সমাধি | ১৯১৮ সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সমাধি, ফাতিহ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক | ||||
সঙ্গিনী | তালিকা
| ||||
বংশধর অন্যদের মধ্যে | তালিকা
| ||||
| |||||
রাজবংশ | উসমানীয় | ||||
পিতা | প্রথম আব্দুলমেজিদ | ||||
মাতা | জন্মদাত্রী মাতা: তিরিমুজগান কাদন দত্তক মাতা: রাহিমে পেরেসতু সুলতান | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম | ||||
তুগরা |
প্রজাতন্ত্রী তরুণ উসমানীয়দের সাথে করা একটি চুক্তি অনুযায়ী তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম সংবিধান জারি করেন,[4] এটি তার প্রাথমিক শাসনকে চিহ্নিতকারী প্রগতিশীল চিন্তাধারার একটি চিহ্ন ছিলো। যাইহোক, ১৮৭৮ সালে উসমানীয় সংসদের সাথে মতবিরোধ উল্লেখ করে[4] তিনি স্বল্পস্থায়ী সংবিধান ও সংসদ উভয়ই স্থগিত করেন। আমলাতন্ত্রের সংস্কার, রুমেলিয়া রেলওয়ে ও আনাতোলিয়া রেলওয়ের সম্প্রসারণ এবং বাগদাদ রেলওয়ে ও হেজাজ রেলওয়ে নির্মাণ সহ তার শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আধুনিকীকরণ অব্যাহত ছিলো। এছাড়াও ১৮৯৮ সালে প্রথম স্থানীয় আধুনিক আইন শিক্ষালয়ের সাথে জনসংখ্যা নিবন্ধন ও গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলো ঘটে: আইন, কলা, বাণিজ্য, পুরকৌশল, পশুচিকিৎসা, রীতিনীতি, কৃষিকাজ ও ভাষাবিদ্যা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য অনেক পেশাদার স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ১৮৮১ সালে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলেও ১৯০০ সালে এটি পুনরায় চালু করা হয় এবং সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও সামরিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সম্পর্ক বিস্তৃত করা হয়। জার্মান সংস্থাগুলো সাম্রাজ্যের রেলওয়ে ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলো।[4] এই আধুনিকীকরণ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ সাম্রাজ্যের অর্থ উসমানীয় সরকারি ঋণ প্রশাসনের মাধ্যমে মহা শক্তির নিয়ন্ত্রণে আসে।
আব্দুল হামিদের শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৮৯৪-১৮৯৬ সালে সংঘটিত আর্মেনীয় ও অ্যাসিরীয়দের গণহত্যার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে। আব্দুল হামিদের শাসনামলে তাকে বহুবার হত্যাচেষ্টা করা হয়। তার বিরুদ্ধে বহু হত্যা প্রচেষ্টার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হলো ১৯০৫ সালে আর্মেনীয় বিপ্লবী ফেডারেশন কর্তৃক ইলদিজ হত্যাচেষ্টা।[5] উসমানীয় বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশও ভিন্নমত ও তরুণ তুর্কি আন্দোলনকে দমন করার জন্য গোপন পুলিশ ব্যবহার করার কারণে তার তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছিলো।[6] ১৯০৮ সালে ঐক্য ও প্রগতি সমিতি নামে পরিচিত একটি গোপন বিপ্লবী তরুণ তুর্কি সংগঠন তরুণ তুর্কি বিপ্লবের মাধ্যমে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে সংসদ প্রত্যাহার করতে ও সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করে। আব্দুল হামিদ এক বছর পরে তার নিরঙ্কুশতাকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন, যার ফলে ১৯০৯ সালে ৩১ মার্চের ঘটনা হিসেবে পরিচিত একটি ঘটনায় ঐক্যবাদী বাহিনী তাকে সিংহাসনচ্যুত করে। নিজের নৃশংসতার ফলে তিনি পশ্চিমে "লাল সুলতান" নামে পরিচিত ছিলেন।[6]