প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য হলো সুপ্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সমসাময়িক কাল পর্যন্ত প্রাচীন গ্রিক ভাষায় রচিত সাহিত্য। প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যের যে আদিতম রচনাগুলি অদ্যাবধি সুলভ, সেগুলি হল আদি সাবেকি যুগে রচিত দুই মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি। এই দুই মহাকাব্যের প্রেক্ষাপট এক আদর্শ সাবেকি অতীত, বর্তমানে যার সঙ্গে মাইসিনীয় যুগের একটি সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয়। ইলিয়াড ও ওডিসি-র সঙ্গে হোমারীয় স্তোত্রাবলি এবং হেসিয়ডের দুই কাব্য থিওগনি ও কার্যাবলি ও দিবসগুলি গ্রিক সাহিত্য ধারার প্রধান ভিত্তিগুলি স্থাপন করেছিল। এই ধারা অব্যাহত ছিল ধ্রুপদি, হেলেনীয় ও রোমান যুগেও।
গীতিকবি স্যাফো, অ্যালসেয়াস ও পিন্ডার গ্রিক কাব্য ধারার আদি বিকাশের যুগে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ইস্কিলুস হলেন প্রাচীনতম গ্রিক ট্র্যাজিক নাট্যকার, যাঁর কোনও নাটক অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ আকারে পাওয়া যায়। সোফোক্লেস খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ইডিপাস-সংক্রান্ত ট্র্যাজেডিগুলি রচনা করে; এগুলির মধ্যে রাজা ইডিপাস ও আন্তিগোনি নাটক দু’টির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে ইউরিপিদেস খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাঁর সেই নাটকগুলির জন্য যেগুলি ট্র্যাজিক বর্গের সীমানা প্রায়শই অতিক্রম করে যেত। কমেডি নাট্যকার অ্যারিস্টোফেনিস ছিলেন পুরনো কমেডি বর্গের নাট্যকার; অন্যদিকে পরবর্তীকালের নাট্যকার মিনান্ডার ছিলেন নতুন কমেডি বর্গের এক আদি অগ্রণী পথপ্রদর্শক। ইতিহাসবিদ হ্যালিকার্নাসাসের হিরোডোটাস ও থুসিডাইডিস (উভয়েই বিদ্যমান ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে) তাঁদের অব্যবহিত পূর্ববর্তী যুগের এবং সমসাময়িক ঘটনাবলির বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। দার্শনিক প্লেটো সংলাপ রচনা করতেন। এই সংলাপগুলির কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু সাধারণভাবে ছিল তাঁর শিক্ষক সক্রেটিসের চিন্তাভাবনা। বিভিন্ন দার্শনিক বিষয় উঠে এসেছিল এই সংলাপগুলিতে। অন্যদিকে প্লেটোর শিশ্য অ্যারিস্টটল অসংখ্য গবেষণা-সন্দর্ভ রচনা করেন, যেগুলি পরবর্তী যুগেও অত্যন্ত প্রভাবশালী রচনা বলে পরিগণিত হত।
পরবর্তীকালের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের অন্যতম রোডসের অ্যাপোলোনিয়াস, আর্কিমিডিস ও প্লুতার্ক। আর্গোনাটদের সমুদ্রযাত্রাকে কেন্দ্র করে আর্গোনটিকা মহাকাব্যটি রচনা করেন অ্যাপোলোনিয়াস। আর্কিমিডিস রচনা করেছিলেন একাধিক বৈপ্লবিক গাণিতিক গবেষণা-সন্দর্ভ। অন্যদিকে প্লুতার্ক অনেকগুলি জীবনী ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক লেখক সামোসাটার লুসিয়ান প্রধানত স্যাটায়ার রচনা করেছিলেন।[1] পরবর্তীকালের গ্রিক সাহিত্য এবং সার্বিকভাবে পাশ্চাত্য সাহিত্যের উপরেও প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যের প্রভাব অপরিসীম। নির্দিষ্টভাবে বললে, অনেক প্রাচীন রোমান লেখকই তাঁদের গ্রিক পূর্বসূরিদের রচনা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছিলেন। রেনেসাঁর সময় থেকে দান্তে আলিগিয়েরি, উইলিয়াম শেকসপিয়র, জন মিলটন, জেমস জয়েস প্রমুখ ইউরোপীয় লেখকেরাও ধ্রুপদি গ্রিক বিষয়বস্তু এবং ভাব থেকে নিজেদের রচনার বহু উপাদান সংগ্রহ করেছেন।