প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবী
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবী বলতে প্রাচীন মিশরে উপাসিত দেবদেবীদের বোঝায়। প্রাগৈতিহাসিক মিশরে কোনও এক যুগে দেবদেবী-কেন্দ্রিক যে সব মতবাদ, প্রথা ও রীতিনীতি গড়ে ওঠেছিল, তাই কালক্রমে মিশরীয় ধর্মের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে গঠন করে। এই দেবদেবীরা ছিলেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও ঘটনার প্রতীক। প্রাচীন মিশরে দেবদেবীদের তুষ্ট করতে মূর্তিপূজা, নৈবেদ্য উৎসর্গ, বলিদান সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালিত, এই সকল প্রাকৃতিক শক্তি মাত অর্থাৎ দৈব শৃঙ্খলা মেনে কাজ করতে পারে। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দ নাগাদ মিশরীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর এই জাতীয় ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদনার দায়িত্ব ফ্যারাওগণ তুলে নেন নিজেদের হাতে। তাঁরা নিজেদের দেবদেবীর প্রতিনিধি বলে দাবি করতেন এবং যে সব মন্দিরে এই সকল ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদিত হত সেগুলি ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও গ্রহণ করেন।
মিশরীয় পুরাণে শুধু দেবতাদের জটিল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিই নয়, বরং এই দেবদেবীদের মধ্যে জটিল সম্পর্কে মানুষের যে-সব ধারণা ছিল (যেমন, পারিবারিক বন্ধন, গোষ্ঠী ও পদমর্যাদার শিথিলতা এবং পৃথক পৃথক দেবতার এক দেবতায় সংযুক্তি) তা-ও প্রকাশ পেয়েছে। পশুপাখি, মানুষ, জড় বস্তু ও বিভিন্ন রূপের সমন্বয়ে শিল্পকলায় দেবদেবীদের যে বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিপ্রকাশ দেখা যায়, তা-ও প্রতীকতত্ত্বের মাধ্যমে এই দেবদেবীদের মৌল বৈশিষ্ট্যগুলিরই দ্যোতক।
মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভিন্ন ভিন্ন দেবদেবী দেবমণ্ডলীতে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় সৌরদেবতা রা, রহস্যময় দেবতা আমুন ও মাতৃকা দেবী আইসিসের নাম। মিশরীয় সৃষ্টিতত্ত্বে সচরাচর সর্বোচ্চ দেবতাকেই জগতের সৃষ্টিকর্তার মর্যাদা দেওয়া হত এবং প্রায়শই এই সর্বোচ্চ দেবতার সঙ্গে সূর্যের জীবনদায়ী শক্তির একটি যোগসূত্র স্থাপন করা হত। মিশরীয় সাহিত্য অংশত পর্যালোচনা করে কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, মিশরীয়েরা ধীরে ধীরে এমন এক একক দৈবশক্তিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন, যিনি সর্ববস্তুর পশ্চাতে এবং অন্যান্য সকল দেবদেবীর অন্তরে নিহিত। তথাপি জগৎ সম্পর্কে তাদের যে মূলগত বহুদেববাদী দৃষ্টিভঙ্গি তা তারা কখনই পরিত্যাগ করেনি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দীতে আতেনবাদের যুগ। এই যুগে রাষ্ট্রধর্ম এককভাবে আতেন নামে এক বিমূর্ত সৌরদেবতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হত।
মিশরীয় বিশ্বাসে দেবদেবীরা সমগ্র জগতে বিরাজমান এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ও মানবজীবনের ধারাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম ছিলেন। জনসাধারণ ব্যক্তিগত কারণে, এমনকি রাষ্ট্রীয় ধর্মাচরণের বৃহত্তর উদ্দেশ্যেও মন্দিরে বা অননুমোদিত পূজাস্থানে গিয়ে দেবদেবীদের পূজা নিবেদন করত। দেবতাদের সাহায্য লাভের আশায় তারা প্রার্থনা করত, বিভিন্ন ক্রিয়াকাণ্ডের মাধ্যমে দেবতাদের দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিয়ে নিতে চেষ্টা করত অথবা নিছক দৈব পরামর্শ গ্রহণের জন্যও দেবতাদের শরণ গ্রহণ করত। মানুষ ও দেবতার এই সম্পর্কটি ছিল প্রাচীন মিশরীয় সমাজের এক মৌলিক অংশ।