বিলুপ্তি
From Wikipedia, the free encyclopedia
জীববিজ্ঞানে বিলুপ্তি বলতে সাধারণত জীব বা একদল ট্যাক্সন, বা একটি প্রজাতির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বোঝায়। বিলুপ্তি সাধারণত প্রজাতির শেষ প্রাণীর মৃত্যুর মুহূর্তটিকে বলা হয়, এরপর সেই প্রজাতির কোনো জীবন্ত নমুনা প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারে আর দেখা যায় না। যদিও তাদের প্রজনন ও পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা এই সময়ের আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে। একটি প্রজাতির সম্ভাব্য ক্ষমতার পরিসীমা খুব বেশি হতে পারে, তাই এই মুহুর্তটি নির্ধারণ করা কঠিন, এবং সাধারণত অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করে এর হিসেব হয়। এই অসুবিধার ফলে বিলুপ্ত, কিন্তু পুনরাবির্ভূত ট্যাক্সনের মতো ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কোনও প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে হলেও, আপাত অনুপস্থিতির কিছু সময় পরে হঠাৎ "পুনরায় আবির্ভূত" হয় (জীবাশ্ম নথি অনুযায়ী)।
সংরক্ষণ অবস্থা | |
---|---|
বিলুপ্ত | |
| |
সংকট জনক | |
| |
কম সংকট জনক | |
|
|
অন্যান্য শ্রেণী | |
| |
সম্পর্কিত বিষয়
| |
উপরে রেড লিস্ট ক্লাসের তুলনা | |
পাঁচশো কোটি প্রজাতির মধ্যে, সমস্ত প্রজাতির ৯৯ শতাংশেরও বেশি,[2] যারা কোন সময় পৃথিবীতে বেঁচে ছিল, সে সব প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে।[3][4][5] পৃথিবীর বর্তমান প্রজাতির সংখ্যা আনুমানিক ১ কোটি থেকে ১.৪ কোটি,[6] যার মধ্যে প্রায় ১২ লাখ প্রজাতি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৮৬ শতাংশেরও বেশির কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।[7] আরো সম্প্রতি, ২০১৬ সালের মে মাসে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে বর্তমানে পৃথিবীতে আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন প্রজাতি রয়েছে যাদের ১ শতাংশের ১০০০ ভাগের এক ভাগ সম্বন্ধে জানা গেছে।[8]
বিবর্তন এর মধ্য দিয়ে প্রজাত্যায়ন (স্পিসিশন) প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রানের বিকাশ ঘটে — তারা কোনও পরিবেশগত যথাযোগ্য স্থান সন্ধান করে নেয় এবং পরিবেশে কোন বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় যখন তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারেনা বা উচ্চশক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। প্রাণী এবং তাদের পরিবেশগত যথাযোগ্য স্থানের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[9] একটি সাধারণ প্রজাতি তার প্রথম উপস্থিতির ১ কোটি বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায়,[5] যদিও জীবিত জীবাশ্ম নামে পরিচিত কিছু প্রজাতি, কয়েক কোটি বছর ধরে অঙ্গসংস্থানের কোনও পরিবর্তন না করে বেঁচে আছে।
গণবিলুপ্তির ঘটনা খুবই কম ঘটে; তবে, কিন্তু একক বিলুপ্তি খুবই সাধারণ ঘটনা। অতি সাম্প্রতিক সময়ে বিলুপ্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ রাখা শুরু হয় এবং বিজ্ঞানীরা বর্তমান উচ্চমাত্রায় বিলুপ্তির ব্যাপারে সতর্কতার কথা জানান।[10][11][12][13] বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ প্রজাতিই বৈজ্ঞানিকভাবে কখনই নথিভুক্ত হয়নি। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন যে বর্তমানে বিদ্যমান উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।[14] ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মানব যুগে ৩০০ স্তন্যপায়ী প্রজাতির ফাইলোজেনেটিক বৈচিত্র মুছে গেছে যেহেতু অন্ত প্লাইস্টোসিন পুনরুদ্ধার করতে ৫০ থেকে ৭০ লাখ বছর প্রয়োজন।[15]
আইপিবিইএস এর দ্বারা ২০১৯ জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশবিজ্ঞান পরিষেবাদি সম্পর্কিত গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে, বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জৈববস্তু ৮২% কমে গেছে, প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল শেষ হয়ে গেছে এবং দশ লক্ষ প্রজাতির সামনে ঝুঁকি রয়েছে বিলুপ্তির — এগুলির অধিকাংশই মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফল। পঁচিশ শতাংশ গাছপালা এবং প্রাণীজ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।[16][17][18]
২০১৯ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী, দশ লক্ষ প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ছিল। ১৭৫০ সাল থেকে কমপক্ষে ৫৭১ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির মূল কারণ হল - বন কেটে ফেলা এবং জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করা জাতীয় মানব ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস করা।[19]
যে সমস্ত প্রজাতি বা ট্যাক্সন বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের বোঝানোর জন্য সেই প্রজাতির নামের পাশে একটি ছোরা চিহ্ন (†) ব্যবহার করা হয়।
.