বোকো হারাম বিদ্রোহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
বোকো হারামে বিদ্রোহ শুরু হয় ২০০৯ সালের জুলাই মাসে,[63][64] যখন বিদ্রোহী জিহাদি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।[65] নাইজেরিয়ার মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য ও ধর্মীয় সহিংসতার দীর্ঘস্থায়ী প্রেক্ষাপটে এই সংঘাত শুরু হয়। বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, দুর্নীতি ও আর্থিক বৈষম্য মিটিয়ে এই অঞ্চলে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।[66]
বোকো হারাম বিদ্রোহ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
২০১৫ সালের মার্চে বোকো হারামের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় নাইজার সেনাবাহিনীর সৈন্য (উপরে) ও মিলিশিয়া বাহিনী (নীচে) | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
বহুজাতিক যৌথ টাস্ক ফোর্স স্থানীয় মিলিশিয়া[8]
|
বোকো হারাম ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (সাময়িক) | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
বোকো হারাম: মোহাম্মাদ ইউসুফ আবু বকর শেকাউ †[39] ISWAP: আবু মুসাব বর্নাভি †[40][41] সানি সুওয়ারম †[42] বা ইদ্রীসা[43][44] বো লাওয়ান (লাওয়ান আবু বকর)[43] হুযাইফা বিন সাদিক[45] | |||||||
শক্তি | |||||||
নাইজেরিয়া সেনাবাহিনী: মিলিশিয়া ও সশস্ত্র গ্রুপ: অজ্ঞাত, (কয়েক হাজার)[46] | মোট সংখ্যা উঠানামা করে; কয়েক হাজার[lower-alpha 1] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
অজানা | হাজার হাজার সদস্য নিহত, বন্দী বা আত্মসমর্পণ করেছে[53][54][55][56][57][58] | ||||||
মোট ৩৫০,০০০ মৃত্যু, এর মধ্যে ৩৫,০০০ সরাসরি[59] ২,৪০০,০০০ জন আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত[60][61][62] |
বোকো হারামের প্রাথমিক বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা মোহাম্মদ ইউসুফকে নাইজেরিয়ার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।[67] তিনি ২০০১ সালে বোকো হারাম নামে পরিচিত সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[68] নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী তাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এবং পরবর্তীতে নাইজেরীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এবং তারা ইউসুফকে হত্যা করে।[68] তিনি চার স্ত্রী এবং ১২ সন্তান রেখে যান। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবু মুসাব আল-বারনাভি, যিনি ২০১৬ সালে এই দলটির নেতৃত্বে আসেন।[68] এর ফলে দলটিতে একটি বিদ্রোহ শুরু করে এবং বিদ্রোহী কমান্ডার ও সাবেক আমির আবু বকর শেকাউ প্রাধান্য অর্জন করতে সক্ষম হন। এর পর আবু বকর শেকাউ বিদ্রোহের ডি ফ্যাক্টো নেতা হয়ে ওঠেন এবং নাইজেরীয় সরকারকে উৎখাত করার পরিবর্তে বোকো হারামের বিভিন্ন দলকে একে অপরের সাথে লড়াই করা থেকে বিরত রাখেন। [69] আল-কায়েদা ও আল-শাবাবসহ অন্যান্য জিহাদি সংগঠন দ্বারা সমর্থিত শেকাউয়ের যুদ্ধ কৌশলগুলি চরম বর্বর এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুস্পষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।[68]
২০০৯ সালে তাদের নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ ও দলটির সদস্যদের নির্মম হতাহতের পর বিদ্রোহীরা ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করতে শুরু করে। ২০১৪ সালে ১০,৮৪৯ জন মারা যাওয়ার সাথে সাথে সহিংসতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বোকো হারাম তার অঞ্চলগুলি ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে।[70][71][72][73] এর ফলে সাব সাহারান আফ্রিকার অন্যান্য দেশ সাহায্য করতে এগিয়ে এলে এই বিদ্রোহ প্রতিবেশী দেশ ক্যামেরুন, চাদ, মালি ও নাইজারে ছড়িয়ে পড়ে।[74] এদিকে ২০১৫ সালের মার্চে বোকো হারাম ইসলামিক স্টেটের পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশ ( আইএসডব্লিউএপি) হয়ে উঠার সাথে সাথে শেকাউ জিহাদিদের মধ্যে তার আন্তর্জাতিক অবস্থান উন্নত করার চেষ্টা করেন।
২০১৫ সালে নাইজেরিয়ার নেতৃত্বাধীন আফ্রিকীয় ও পশ্চিমা দেশগুলির জোটের যৌথ আক্রমণের ফলে বিদ্রোহীরা পিছু হঠে এবং সাম্বিসা বন ও চাদ হ্রদে ঘাঁটি স্থাপন করে। এর ফলে বোকো হারামের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অসন্তোষ বেড়ে যায়। আন্দোলনের ভিন্নমতাবলম্বীরা নিজেদেরকে আইএসের কেন্দ্রীয় কমান্ডের সাথে জোটবদ্ধ করে এবং শেকাউয়ের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ফলে বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংস বিভক্ত হয়। তারপর থেকে শেকাউ ও তার গোষ্ঠীকে সাধারণত বোকো হারাম হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে আবু মুসাব বারনাভির অধীনে ISWAP হিসাবে কাজ করতে থাকে। কিছু দিন অন্তঃকলহে ব্যস্ত থাকার পর বোকো হারাম ও ISWAP ২০১৮ ও ১৯ সালে নতুন আক্রমণ শুরু করে এবং পুনরায় শক্তি বৃদ্ধি করা শুরু করে।
২০১০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিহত ও হতাহতের পরিসংখ্যানে বোকো হারাম বিদ্রোহ বিশ্বের সহিংস বিদ্রোহগুলির শীর্ষে ছিল।[75][76][77] ২০১৩ সালে নাইজেরীয় সরকার ও বোকো হারামের মধ্যে সংলাপ নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বোকো হারাম সম্প্রদায়কে সাধারণ ক্ষমা প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন।[78][79] সাধারণ ক্ষমার মধ্যে বোকো হারাম যোদ্ধাদের ক্ষমা মঞ্জুর করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে গোষ্ঠীটি একটি অডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে। তারা দাবি করে যে, তারা দুর্নীতি ও বৈষম্য মিটিয়ে নাইজেরিয়ায় একটি ইসলামি রাষ্ট্রগঠনের জন্য লড়াই করছে এবং এটি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই করে যাবে। তারা নয়, বরং সরকারই মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা করছে।[80]
২০২১ সালের মে মাসে ISWAP সাম্বিসা বনে বোকো হারাম যোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে ঘাঁটিটি দখল করে এবং বোকো হারামের নেতা আবুবকর শেকাউ নিজের গ্রেফতার এড়াতে একটি আত্মঘাতী ভেস্ট ব্যবহার করে যুদ্ধের সময় নিহত হন বলে বিরোধীরা দাবি করে। তারপর আগস্টে ISWAP এর প্রধান কমান্ডার আবু মুসাব বারনাভিও নিহত হন বলে রিপোর্ট করা হয়। শেকাউয়ের মৃত্যুর পর বোকো হারাম যোদ্ধাদের অনেক সদস্য আত্মসমর্পণ করে এবং অন্যরা ISWAP এ চলে যায়। নাইজেরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতে, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫১,১১৪ জন বিদ্রোহী ও তাদের পরিবার আত্মসমর্পণ করে। এদের মধ্যে ১১,৩৯৮ জন পুরুষ, ১৫,৩৯১ জন মহিলা ও ২৪,৩৩৫ জন শিশু রয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে সাম্বিসা বনে বোকো হারামের শীর্ষ নেতা আবু বকর সারকি নিহত হন। একটি অন্তঃকলহে আবু বকর সারকি ISWAP এর ক্যাম্পে একটি সামরিক কনভয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। সারকি ও তার কিছু যোদ্ধা পালিয়ে যাওয়ার সময় সৈন্যদের আরেকটি দলের কাছে তার মৃত্যু হয়।[81] ২০২২ সালের ১৬ মে বোকো হারামের বিশিষ্ট প্রচারক আরি-ডিফিনোমা নাইজেরীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।[82][83][82]