চাঁদ
পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। পৃথিবী থেকে চাঁদের এই যে দূরত্ব এটা কিন্তু সবসময় এক থাকে না। কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। বর্তমান শতাব্দীতে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল গত ১৯১২ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে। এই তারিখে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ৩,৪৮,২৫৯ কিলোমিটার (২,১৬,৩৯৮ মাইল)। এই শতাব্দীতে চাঁদের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বোচ্চ স্তরে গিয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২রা মার্চে। এই দিনে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল ৩,৯৮,৫৯৮ কিলোমিটার (২,৪৭,৬৭৫ মাইল)। চাঁদের বয়স প্রায় ৩৯০০ মিলিয়ন বছর। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। ওজন ৭.২৩×১০^১৯ (অর্থাৎ ১০ এর ডানে ১৯টি শূণ্য বসিয়ে তাকে ৭.২৩ দিয়ে গুণ করলে যা হয়)। ঘনত্ব জলের চেয়ে ৩,৩৪২ ভাগ ঘন। গতি ৩,৬৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় (২,২৮৭ মাইল)। এটি প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্র কলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রম আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্র কলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে।
বিবরণ | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বিশেষণ | চন্দ্রীয় | ||||||||||||
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | ৩৮৪,৩৯৯ কিমি (0.00257 জ্যোএ) | ||||||||||||
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০৫৪৯ | ||||||||||||
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | ১.০২২ কিমি/সে (২২৮৬ মাপ্রঘ) | ||||||||||||
নতি | ভূ-কক্ষের সাথে ৫.১৪৫° (পৃথিবীর বিষুবের সাথে ১৮.২৯° এবং ২৮.৫৮° -এর মধ্যে) | ||||||||||||
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা | পশ্চাদপসরমান, ১৮.৬ বছরে একবার আবর্তন | ||||||||||||
যার উপগ্রহ | পৃথিবী | ||||||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||||||||||
গড় ব্যাসার্ধ | ১,৭৩৭.১০৩ কিমি (পৃথিবীর ০.২৭৩ গুণ) | ||||||||||||
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ | ১,৭৩৮.১৪ কিমি (পৃথিবীর ০.২৭৩ গুণ) | ||||||||||||
মেরু ব্যাসার্ধ | ১,৭৩৬.০ কিমি (পৃথিবীর ০.২৭৩ গুণ) | ||||||||||||
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৩.৭৯৩×১০৭ কিমি² (পৃথিবীর ০.০৭৪ গুণ) | ||||||||||||
আয়তন | ২.১৯৫৮×১০১০ কিমি³ (পৃথিবীর ০.০২০ গুণ) | ||||||||||||
ভর | ৭.৩৪২×১০২২ কেজি (পৃথিবীর ০.০১২৩ গুণ) | ||||||||||||
গড় ঘনত্ব | ৩,৩৪৩.০ কেজি/মি৩ | ||||||||||||
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ১.৬২ মি/সে২ (০.১৬৫৪ জি) | ||||||||||||
মুক্তি বেগ | ২.৩৮ কিমি/সে (৫৩২৪ মাপ্রঘ) | ||||||||||||
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল | ২৭.৩২১ ৫৮২ দিন (সঙ্কালিক) | ||||||||||||
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ | ৪.৬২৭ মি/সে (১০.৩৪৯ মাপ্রঘ) | ||||||||||||
অক্ষীয় ঢাল | ভূ-কক্ষের সাথে ১.৫৪২৪° | ||||||||||||
প্রতিফলন অনুপাত | ০.১২ | ||||||||||||
| |||||||||||||
আপাত মান | −১২.৭৪ পর্যন্ত | ||||||||||||
কৌণিক ব্যাস | ২৯′ থেকে ৩৩′ | ||||||||||||
বায়ুমণ্ডল | |||||||||||||
বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে।