গ্রহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
গ্রহ বলতে জ্যোতির্বিজ্ঞানে মহাবিশ্বের এমন যেকোন বস্তুকে বোঝানো হয় যার কেবলমাত্র নিজের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে গোলাকার রূপ ধারণ করার ক্ষমতা আছে, যা তার নিকটতম নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে, যার ভর তাপ-নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু করে সূর্যের মত শক্তি উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়, যে তার একদম নিকটে থাকা নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং যে তার প্রতিবেশের সব ছোট ছোট বস্তুকে সরিয়ে দিয়েছে বা নিজের মধ্যে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। সাধারণত গ্রহরা কোন না কোন তারা বা নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তবে এর ব্যতিক্রম থাকার সম্ভাবনাও অনেকে ব্যক্ত করেছেন।[1][2][3] গ্রহের ইংরেজি প্রতিশব্দ planet-এর মূল বেশ প্রাচীনকালে প্রোথিত যার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, পৌরাণিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি। প্রাচীনকালের অনেক সংস্কৃতিতেই গ্রহদেরকে স্বর্গীয় বা দেবতাদের দূত ভাবা হতো। মানুষের জ্ঞানের সীমা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমরা জানি এরা কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। ২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন একটি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সৌরজগতের গ্রহগুলোর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারিত করে। এই আধুনিক সংজ্ঞা অনুসারে ১৯৫০ সালের পূর্বে আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে কেবল ৮টিকে গ্রহের মর্যাদায় বহাল রাখা হয়। কিন্তু সেরেস, পালাস, জুনো, ভেস্তা এবং প্লুটোর মত কিছু বস্তু যাদের কোন কোনটিকে আগে অনেক বিজ্ঞানী গ্রহ বলতেন, তাদের সবগুলোকেই গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
গ্রিক জ্যোতির্বিদ টলেমি মনে করতেন গ্রহরা পৃথিবীর চারদিকে কিছু ডিফারেন্ট এবং এপিসাইকেল-এর মাধ্যমে আবর্তিত হয়। গ্রহরা যে সূর্যকে আবর্তন করছে এই ধারণা আগে বেশ কয়েকবার প্রস্তাবিত হলেও সপ্তদশ শতকে গালিলেও গালিলেই-এর দুরবিন দিয়ে করা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই তা প্রথমবারের মত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যবেক্ষণকৃত উপাত্ত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে জার্মান জ্যোতির্বিদ ইয়োহানেস কেপলার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন গ্রহদের কক্ষপথ বৃত্তাকার নয়, বরং উপবৃত্তাকার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের যন্ত্রের দিন দিন উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে জানা গেছে যে, অন্য গ্রহগুলোরও ঘূর্ণন অক্ষ খানিকটা আনত এবং অনেকগুলোর পৃথিবীর মতই মেরু বরফ এবং ঋতু পরিবর্তন রয়েছে। খুব সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণা বলছে, অন্য গুহগুলোতে পৃথিবীর মত অগ্ন্যুৎপাত, হারিকেন, প্লেট টেকটোনিক এবং এমনকি পানিও আছে।
গ্রহদেরকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়: বৃহৎ স্বল্প ঘনত্বের গ্যাসীয় দানব এবং পাথুরে ভূসদৃশ গ্রহ। সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আটটি। সূর্য থেকে বাইরের দিকে গেলে প্রথম চারটি গ্রহ হচ্ছে ভূসদৃশ, যথা, বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। এর পর চারটি গ্যাসীয় দানব: বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। এর মধ্যে ছয়টি গ্রহেরই এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। এর পাশাপাশি আইএইউ সংজ্ঞা অনুযায়ী রয়েছে ৬টি বামন গ্রহ, এছাড়া আরও অনেকগুলো বামন গ্রহের তালিকাভূক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, আর আছে হাজার হাজার ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু।
১৯৯২ সাল থেকে আকাশগঙ্গার অন্যান্য তারার চারপাশে অনেক গ্রহ আবিষ্কৃত হয়ে আসছে, যাদেরকে বহির্গ্রহ বলা হয়। ২০১৩ সালের ২২শে মে তারিখ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে আবিষ্কৃত মোট বহির্গ্রহের সংখ্যা হচ্ছে ৮৮৯, মোট গ্রহ জগতের সংখ্যা ৬৯৪ এবং মোট একাধিক গ্রহবিশিষ্ট জগতের সংখ্যা ১৩৩।[4] এদের আকার এবং ভর পৃথিবীর মত থেকে শুরু করে বৃহস্পতির চেয়ে অনেক বেশি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১১ সালের ২০শে ডিসেম্বর কেপলার মহাকাশ দুরবিন প্রথম পৃথিবীর সমান আকারের বহির্গ্রহ, কেপলার ২০ই ও কেপলার ২০এফ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। তারা কেপলার ২০ তারাটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।[5] ২০১২ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে আকাশগঙ্গার প্রতিটি তারার চারপাশে গড়ে ১.৬টি করে গ্রহ থাকতে পারে, এছাড়া থাকতে পারে আরও অনেক নিঃসঙ্গ গ্রহ যারা কোন তারাকে আবর্তন করে না।[6] ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, আকাশগঙ্গায় পৃথিবীর সাথে তুলনীয় আকারের (পৃথিবীর ভরের ০.৮ থেকে ১.২৫ গুণ) অন্তত ১৭০০ কোটি বহির্গ্রহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যারা তাদের তারাকে ৮৫ দিন বা তার কম সময়ে একবার আবর্তন করে।[7]