ছায়াপথ
From Wikipedia, the free encyclopedia
ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি (ইংরেজি: galaxy) তারা, নাক্ষত্রিক অবশেষ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, ধূলিকণা ও তমোপদার্থ নিয়ে গঠিত মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ একটি জগৎ।[1][2] "গ্যালাক্সি" শব্দটির উৎস গ্রিক গালাক্সিআস্ (γαλαξίας) শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ, ‘দুধালো’ (এটি আকাশগঙ্গা অর্থে ব্যবহৃত হত)। আকারগত দিক থেকে ছায়াপথগুলি বামনাকৃতি (কয়েক কোটি বা ১০৮ নক্ষত্র নিয়ে গঠিত) থেকে দানবাকৃতি (একশো লাখ কোটি বা ১০১৪ নক্ষত্র নিয়ে গঠিত) পর্যন্ত হতে পারে[3] প্রতিটি ছায়াপথই তার ভরকেন্দ্রটির চারিদিকে আবর্তনশীল।
দৃশ্যগত অঙ্গসংস্থান অনুযায়ী ছায়াপথগুলিকে উপবৃত্তাকার,[4] সর্পিল বা অনিয়তাকার[5] – এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। মনে করা হয় যে অনেক ছায়াপথের কেন্দ্রেই অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর অবস্থিত। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রীয় কৃষ্ণগহ্বরটি ধনু এ* নামে পরিচিত। এটি সূর্য অপেক্ষা ৪০ লক্ষ গুণ অধিক ভরযুক্ত।[6] ২০১৬ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী, পর্যবেক্ষিত ছায়াপথগুলির মধ্যে প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী ছায়াপথটি হল জিএন-জেড১১। পৃথিবী থেকে এটির সমসঞ্চরণশীল দূরত্ব হল ৩২০০ কোটি আলোকবর্ষ এবং মহাবিস্ফোরণের মাত্র ৪০ কোটি বছর পরেও এটির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
২০২১ সালে নাসার নিউ হোরাইজনস স্পেস প্রোবের তথ্য ব্যবহার করে জানা যায় যে, ২০,০০০ কোটি (২×১০১১) ছায়াপথের অস্তিত্ব রয়েছে।[7] উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের একটি পরিগণনা অনুযায়ী, মনে করা হয়েছিল পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে দুই লাখ কোটি (২×১০১২) বা ততোধিক[8][9] ছায়াপথ রয়েছে এবং সর্বসমেত তারা রয়েছে আনুমানিক ১×১০২৪[10][11] (পৃথিবী গ্রহের সকল সমুদ্রসৈকতের সকল বালুকণার সংখ্যার থেকেও বেশি)।[12] অধিকাংশ ছায়াপথেরই ব্যাস ১,০০০ থেকে ১০০,০০০ পারসেকের মধ্যে (প্রায় ৩,০০০ থেকে ৩০০,০০০ আলোকবর্ষ) এবং এগুলির পারস্পরিক দূরত্ব দশ লক্ষ পারসেকেরও (বা মেগাপারসেক) বেশি। উদাহরণস্বরূপ, আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ব্যাস অন্তত ৩০,০০০ পারসেক (১০০,০০০ আলোকবর্ষ) এবং এটির নিকটবর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের থেকে এটির দূরত্ব ৭৮০,০০০ পারসেক (২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ)।
ছায়াপথগুলির মধ্যবর্তী মহাকাশ পূর্ণ হয়ে রয়েছে একতি পাতলা গ্যাস দ্বারা (আন্তঃছায়াপথ মাধ্যম)। এটির গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে এক পরমাণু অপেক্ষাও কম। অধিকাংশ ছায়াপথই মহাকর্ষীয় টানে গুচ্ছ, স্তবক ও মহাস্তবকে বিন্যস্ত। আকাশগঙ্গা ছায়াপথ হল স্থানীয় গুচ্ছের অংশ, যেটিতে প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে আকাশগঙ্গা ও অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ। এই গুচ্ছটি কন্যা মহাস্তবকের অংশ। বৃহত্তর পরিসরে এই সংযোগগুলি সাধারণভাবে বিন্যস্ত হয়ে আস্তর ও সূত্রে, যাকে ঘিরে থাকে অপরিমেয় শূন্যতা।[13] স্থানীয় গুচ্ছ ও কন্যা মহাস্তবক দুইই ল্যানিয়াকেয়া নামে অনেকটা বড়ো এক মহাজাগতিক গঠনের অংশ।[14]